মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন এবং চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে, যা সৌরজগত সম্পর্কে আমাদের ধারণা আবারো বদলে দিতে পারে। একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দলের দাবি, সৌরজগতের প্রান্তে একটি রহস্যময় নবম গ্রহ, যার নাম ‘প্ল্যানেট নাইন’ বা ‘প্ল্যানেট এক্স’, লুকিয়ে রয়েছে।
তাইওয়ান, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা গত ৪০ বছর ধরে মহাকাশযান থেকে সংগৃহীত ডেটা বিশ্লেষণ করে এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তারা ধারণা করছেন, পৃথিবী থেকে অনেক দূরের একটি গ্রহ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। ১৯৮৩ সালের ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল স্যাটেলাইট (আইআরএএস) এবং ২০০৬-২০০৭ সালে জাপানের মহাকাশ পর্যবেক্ষক উপগ্রহ একেএআরআই থেকে প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে তারা এই গ্রহের অস্তিত্বের সন্ধান পেয়েছেন।
২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো প্ল্যানেট নাইনের অস্তিত্বের বিষয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যখন ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির দুটি জ্যোতির্বিজ্ঞানী সৌরজগতের নেপচুনের বাইরে এক অদৃশ্য বৃহৎ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উপস্থিতি শনাক্ত করেন, যা সম্ভবত একটি গ্রহ। সেই সূত্র ধরেই নতুন গবেষণায় ১৩টি সম্ভাব্য বস্তু বিশ্লেষণ করে একটি বস্তু শনাক্ত করা হয়েছে, যা সূর্যকে ধীরে ধীরে আবর্তন করছে।
এই বস্তুটি সূর্য থেকে প্রায় ৪৬.৫ বিলিয়ন থেকে ৬৫.১ বিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থান করছে, যা প্লুটো থেকে প্রায় ২০ গুণ বেশি দূরে। প্লুটো ২০০৬ সালে ‘নবম গ্রহ’ হিসেবে স্বীকৃতি হারায় এবং এটি সূর্য থেকে ৪ বিলিয়ন মাইলের কম দূরত্বে থাকে।
প্ল্যানেট নাইনের অবস্থান কুইপার বেল্টে হতে পারে, যেখানে বরফে মোড়া বস্তু, ধূমকেতু এবং বামন গ্রহ রয়েছে। যদি সেখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকে, তবে তা হয়তো এক্সট্রিমোফাইল, যেগুলো ভয়ানক পরিবেশেও টিকে থাকতে সক্ষম। তবে, সৌরজগতের প্রান্তে এত দূরে অবস্থিত এই গ্রহে তাপমাত্রা হতে পারে -৩৬৪°F থেকে -৪০৯°F, যা প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনাকে আরও কঠিন করে তোলে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এই গ্রহটির ভর পৃথিবীর চেয়ে ৭ থেকে ১৭ গুণ বেশি এবং এর আকার ইউরেনাস বা নেপচুনের মতো হতে পারে। তবে, সূর্যের আলোর শক্তি এত দূরে পৌঁছায় না, তাই অন্য কোনো শক্তির উৎস প্রয়োজন হবে।
এই গ্রহের কক্ষপথ এখনো পুরোপুরি নির্ধারণ করা হয়নি, তবে গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এর অস্তিত্ব নিশ্চিত হলে সৌরজগতের কিছু পুরনো রহস্য উন্মোচিত হতে পারে। নাসার মতে, যদি প্ল্যানেট নাইনের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি আমাদের সৌরজগতকে আরও সাধারণ এবং ছায়াপথের অন্যান্য গ্রহব্যবস্থার মতো দেখাবে।