মার্ক জাকারবার্গ ও তাঁর স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের উদ্যোগে ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার বে এরিয়ায় চালু হওয়া অবৈতনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘দ্য প্রাইমারি স্কুল’ আগামী বছর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিম্নআয়ের পরিবারের শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা একত্রে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চালু হওয়া এই স্কুলটি ছিল তাদের দাতব্য সংস্থা চ্যান-জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভের (সিজেআই) একটি অংশ।
স্কুল কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের পর স্কুলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। এই সিদ্ধান্তকে ‘কঠিন’ বলে জানালেও স্পষ্ট কোনো কারণ প্রকাশ করা হয়নি।
তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ‘সান ফ্রান্সিসকো স্ট্যান্ডার্ড’ ও ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চ্যান-জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভের আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়াই এর মূল কারণ। যদিও সিজেআই-এর একজন মুখপাত্র বিষয়টিকে পুরোপুরি স্কুল বোর্ডের সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেন, আর্থিক ভূমিকা নিয়ে কোনো বক্তব্য দেননি।
স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা। এক অভিভাবক জানান, স্কুলটি তাদের সম্প্রদায়ের জন্য এক বড় আশীর্বাদ ছিল, যা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। স্কুলটি শুরু থেকেই কম আয়ের, বৈচিত্র্যপূর্ণ পটভূমির শিশুদের জন্য এক অনন্য শিক্ষা মডেল হিসেবে কাজ করেছে। ২০২৩ সালের কর-নথি অনুযায়ী, এর ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ছিল ‘অপ্রতিনিধিত্বশীল সংখ্যালঘু’ গোষ্ঠীর।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা এবং অভিভাবকদের জন্য ‘প্যারেন্ট ওয়েলনেস কোচ’-এর মতো অনন্য সেবা দিয়ে এসেছে।
স্কুল বন্ধ হলেও, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও শিক্ষার্থীদের সহায়তায় সিজেআই ৫০ মিলিয়ন ডলারের একটি অনুদান ঘোষণা করেছে। স্কুলের সিনিয়র ম্যানেজার কারসন কুক জানিয়েছেন, শেষ শিক্ষাবর্ষেও শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার অঙ্গীকার রয়েছে তাদের।
এদিকে, চ্যান-জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভের সাম্প্রতিক কৌশলগত পরিবর্তন—যেখানে সামাজিক প্রকল্প থেকে সরে এসে বিজ্ঞান গবেষণায় অধিক জোর দেওয়া হচ্ছে—এই সিদ্ধান্তের পেছনে প্রভাব রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন, মার্ক জাকারবার্গের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তনও ভূমিকা রেখেছে। সম্প্রতি তাঁর সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠতা ও মেটার পক্ষ থেকে ট্রাম্পের বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক অনুদান দেওয়ার বিষয়টি সে ধারণাকে শক্তিশালী করে।
সব মিলিয়ে, সামাজিক ন্যায়ের উদ্দেশ্যে চালু হওয়া একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নীতিগত ও আর্থিক দিক পরিবর্তনের কারণে হারিয়ে যাচ্ছে—যা স্থানীয় কমিউনিটিতে গভীর হতাশা তৈরি করেছে।