ব্রিটিশ এমপি ও সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগের পক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণ উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)—এমন অভিযোগ করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। তাঁদের দাবি, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ আইনগত প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করছে এবং টিউলিপের ‘ন্যায়বিচার পাওয়ার মৌলিক অধিকার’ ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লন্ডন থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, দুদক কর্তৃক জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন টিউলিপের আইনজীবীরা। তাঁদের ভাষ্যে, এক মাস আগে অনুরোধ করা হলেও এখন পর্যন্ত দুদক কোনো তথ্য-প্রমাণ সরবরাহ করেনি।
টিউলিপ ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে একটি বড় অবকাঠামো প্রকল্প থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। অভিযোগে বলা হয়েছে, টিউলিপ তাঁর খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ করে পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পে তাঁর মা এবং দুই ভাইবোনের নামে তিনটি প্লট বরাদ্দ নেওয়াতে সহায়তা করেন।
বাংলাদেশের একটি আদালত ১৩ এপ্রিল টিউলিপকে ২৭ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে তাঁর মা শেখ রেহানা, ভাই রাদওয়ান মুজিব এবং বোন আজমিনার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে ব্রিটিশ লেবার পার্টির মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ। তিনি এবং তাঁর পরিবার সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
টিউলিপের পক্ষে কাজ করা আইন সংস্থা স্টিফেনসন হারউড দাবি করেছে, দুদক একতরফাভাবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে এবং ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির হুমকি দিচ্ছে—যা টিউলিপের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা। তাঁরা আরও অভিযোগ করেন, টিউলিপ বা তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ না করেই মামলা এগিয়ে নিচ্ছে দুদক।
চিঠিতে বলা হয়, “দুদক কেবল অভিযোগ দায়ের করে থেমে থাকেনি; তারা সংবাদমাধ্যমে ব্রিফ করেছে, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক হুমকি দিচ্ছে, অথচ কোনো আইনি নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করেনি।” এতে আরও বলা হয়, “এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের লঙ্ঘন এবং এটি ইঙ্গিত দেয়, টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে আচরণ কেমন হতে চলেছে।”
স্টিফেনসন হারউড জানায়, তারা দুদকের কাছে দুটি চিঠি পাঠালেও এখনো কোনো জবাব পায়নি।
অন্যদিকে, দুদক চেয়ারম্যান আবদুল মোমেন বলেছেন, বিষয়টি এখন আদালতের আওতায় এবং বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ কোনো চিঠি চালাচালিতে যাবে না। তাঁর ভাষ্যে, “চিঠিপত্র আদালতের প্রক্রিয়ার বিকল্প হতে পারে না। যদি তিনি (টিউলিপ) আদালতে হাজির না হন, তাহলে তাঁকে পলাতক আসামি হিসেবে বিবেচনা করা হবে।”