ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মিয়ানমারকে সহায়তা করবে রাশিয়া।

Uncategorized আন্তর্জাতিক

ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমারে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রুশ পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান রোসাটম এই তথ্য নিশ্চিত করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে। এই ঘোষণাটি এমন এক সময় এসেছে, যখন দেশটি সাম্প্রতিক এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রায় ৪ হাজার মানুষের প্রাণহানির শিকার হয়েছে।

গত মার্চ মাসে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইং ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি ছোট আকারের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন নিয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে দেশটিতে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়, যাতে অন্তত ৩৭০০ জন মারা যায়—যা সাম্প্রতিক দশকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দুর্যোগ।

চুক্তি অনুযায়ী, রোসাটম ১১০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ছোট মডুলার চুল্লি (SMR) নির্মাণে সহযোগিতা করবে, যার মধ্যে থাকবে দুটি ৫৫ মেগাওয়াটের রিঅ্যাক্টর। রোসাটম এক ই-মেইল বার্তায় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ভূমিকম্প তাদের পরিকল্পনায় কোনো প্রভাব ফেলেনি। তারা বলেছে, প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান মেনে চলে, যার মধ্যে ভূমিকম্প প্রতিরোধী প্রযুক্তিও রয়েছে।

ভূমিকম্পে দেশের অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মিয়ানমারে পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত রোসাটম এর আগে প্রকাশ করেনি। প্রকল্পটি কোথায় নির্মাণ হবে বা কবে কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোনো তথ্য দেয়নি। তবে জানা গেছে, এটি মূলত বরফভাঙা জাহাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা RITM-200N চুল্লি দিয়ে চালিত হবে।

রয়টার্স বিষয়টি জানতে চাইলে মিয়ানমার জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পটি এমন সময়ে শুরু হতে যাচ্ছে, যখন ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ চলছে। নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতা দখল করে সামরিক জান্তা। এর পর থেকে তারা দেশের বড় অংশের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে এবং রাশিয়াসহ সীমিত সংখ্যক মিত্র রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

চলমান সহিংসতায় মিয়ানমারের ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং দেশটির কৃষিনির্ভর অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাশিয়ার অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলেও মিয়ানমার বিকল্প অর্থায়নের পথও বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে রোসাটম। তারা বলেছে, এতে নিজস্ব অর্থ ও বৈদেশিক ঋণ—দুই ধরনের তহবিল ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ও মিসরে রাশিয়া আগেও স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সহায়তা করেছে।

এদিকে, মিয়ানমারের পারমাণবিক প্রকল্প ঘিরে সতর্ক দৃষ্টি রাখছে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড। এক নিরাপত্তা সূত্রের বরাতে জানা গেছে, প্রস্তাবিত স্থাপনাটি রাজধানী নেপিদোতে নির্মিত হতে পারে। আরও দুটি সম্ভাব্য স্থান হিসেবে উঠে এসেছে মধ্য বাগো অঞ্চল এবং দক্ষিণ মিয়ানমারের দাওয়েই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল—যেখানে রাশিয়া ও মিয়ানমার একটি বন্দর ও তেল শোধনাগার নির্মাণের পরিকল্পনাও করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *