আলোচনা হয়েছে, তবে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি

জাতীয় দেশজুড়ে বাংলাদেশ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যদের সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়ার ঘোষণা দিলেও, এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার। এই বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, যার ফলে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দিতে হলে অবশ্যই তা বিদ্যমান আইন ও বিধিমালার আওতায় করতে হবে। কোনো নতুন আইন, বিধি, পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন ছাড়া কাউকে এই ধরনের সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকার যদি এই পথে না চলে, তাহলে শহীদ পরিবারের জন্য চাকরিতে আলাদা কোটা চালু করতে হবে।

জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া মনে করেন, শহীদ পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে হলে আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রয়োজন হবে। কারণ, বিভিন্ন দপ্তরের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নিয়োগবিধি প্রযোজ্য এবং কেবল প্রজ্ঞাপন দিয়েই সেই বিধি বদলানো সম্ভব নয়। একক কোনো আদেশের মাধ্যমে অগ্রাধিকার দিলে ভবিষ্যতে তা আইনগত প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে।

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। এই আন্দোলনের চাপে ২৩ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে, যেখানে ৯৩ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে পূরণের নির্দেশনা দেওয়া হয় এবং বাকি ৭ শতাংশের জন্য নির্ধারিত প্রার্থী গ্রুপ উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, শহীদ পরিবারের সদস্যদের চাকরিতে অগ্রাধিকার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ অধিশাখার যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ শামীম সোহেল জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তাঁরা কোনো নির্দেশনা পাননি। মন্ত্রণালয়ের পাঁচটি অধিশাখার কোথাও এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা পৌঁছেনি বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ২৮ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা দেন যে, শহীদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। তবে কিভাবে এই সুবিধা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও একই কথা বলে আসছেন, তবে কার্যকর দিকনির্দেশনার অভাব রয়ে গেছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার চাইলে একটি আলাদা গাইডলাইন তৈরি করে চাকরিতে শহীদ পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দিতে পারে, তবে এখনো সে পথে কোনো উদ্যোগ নেই। নির্দেশনা পেলে মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়ন করবে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো সুবিধা দিতে হলে আলাদা কোটা নির্ধারণ করতেই হবে।

এর আগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও আহতদের মতোই শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কোটা চালু করা হয়েছিল। পরে সমালোচনার মুখে তা বাতিল করে প্রতিটি শ্রেণিতে একটি অতিরিক্ত আসন রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এদিকে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ইতিহাস, শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং শহীদ ও আহতদের পুনর্বাসনসহ নানা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর’ গঠনের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই অধিদপ্তর শহীদ ও আহতদের চিকিৎসা, অনুদান, প্রশিক্ষণ, ঋণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকবে। তবে কর্মসংস্থান কিভাবে নিশ্চিত করা হবে, তা খসড়া নীতিতে স্পষ্ট নয়।

খসড়া অনুযায়ী, এই অধিদপ্তর শহীদ ও আহতদের তালিকা তৈরি ও সংরক্ষণ, গেজেটে প্রকাশ, গণকবর ও স্মৃতিফলক সংরক্ষণ, ইতিহাস ও স্মৃতি রক্ষায় গবেষণা নীতি প্রণয়ন, ‘৫ আগস্ট: জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’ পালন এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মতো নানা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। অধিদপ্তর গঠনের পর এ সংক্রান্ত বিশেষ সেল বিলুপ্ত হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন জানিয়েছেন, শহীদ পরিবার ও আহতদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর সংশ্লিষ্ট বিধির মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *