সৌদি তরুণী জারা: ‘হালাল র‍্যাপ’ গান দিয়ে ঝড় তুলেছেন অনলাইনে

বিনোদন

‘হালাল র‍্যাপ’—শোনার পর হয়তো অনেকেই অবাক হবেন। কিন্তু সৌদি আরবের তরুণী জারা, যিনি ‘হুডজাবি’ নামে পরিচিত, সেই ধারণাকে একদম নতুন আঙ্গিকে হাজির করেছেন। মাত্র ২৭ বছর বয়সেই র‍্যাপ সংগীতের ভিন্নধর্মী এক ধারা তৈরি করে সামাজিক মাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছেন তিনি।

দুবাইভিত্তিক গণমাধ্যম খালিজ টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জারা জানান, তিনি ধর্মপরায়ণ মুসলিম এবং তাঁর গানগুলোতে প্রচলিত র‍্যাপের মতো অশ্লীলতা বা গালিগালাজ নেই। বরং র‍্যাপকে ব্যবহার করছেন প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে। ছোটবেলা থেকেই শব্দ ও ছন্দ নিয়ে খেলা করতে ভালোবাসতেন জারা। বাড়ির লোকজনকে বলতেন, “একটা শব্দ দাও”, আর সেই শব্দ নিয়ে ফ্রিস্টাইল ছন্দ তৈরি করতেন—যা পরে র‍্যাপে রূপ নেয়।

সৌদি আরবের প্রাথমিক দিককার নারী র‍্যাপারদের মধ্যে জারা অন্যতম। বর্তমানে তিনি দুবাইয়ে থাকছেন এবং গান গাইছেন আরবি, ইংরেজি ও সুইডিশ ভাষায়। সম্প্রতি তাঁর প্রকাশিত গান ‘মোরালস’ তরুণদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সবসময় হিজাব ও হুডি পরে থাকায় সংগীত অঙ্গনে তিনি পরিচিত ‘হুডজাবি’ নামে।

জারা বলেন, তিনি পুরুষ সহশিল্পীদের সঙ্গে গান করেন না এবং নিজের ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রেখেই সংগীতচর্চা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংগীতকে তিনি দেখেন বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে। তাঁর গানের বিষয়বস্তু ঘোরে বর্ণবৈষম্য, মানসিক স্বাস্থ্য, লিঙ্গভিত্তিক সমস্যা ও নৈতিকতা নিয়ে।

অন্য শিল্পীদের গান খুব একটা শোনেন না জারা, কারণ এতে নিজের গানে বাইরের প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন। নিজের মৌলিকতা ধরে রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত।

জারার সংগীতযাত্রায় সবচেয়ে বড় প্রেরণা ও সহযোগী তাঁর বাবা। তিনি বলেন, বাবার সহযোগিতা ছাড়া অনেক জায়গায় যাওয়া সম্ভব হতো না, বিশেষ করে যেখানে পুরুষদের আধিপত্য বেশি। র‍্যাপে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানানোর পর বাবা যখন তাঁকে কোন ধরনের র‍্যাপ করতে চান জিজ্ঞাসা করেন, তখনই জারা উপলব্ধি করেন—প্রচলিত র‍্যাপে এমন কোনো গান নেই যা একজন ধর্মপ্রাণ মানুষকে দেখানো যায়। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর ভেতর জন্ম নেয় র‍্যাপের ধরন বদলে দেওয়ার সংকল্প।

‘মোরালস’ গানটি যুক্তরাজ্যের ড্রিল স্টাইল দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও, জারা চান না মানুষ তাঁকে কেবল র‍্যাপার হিসেবে চিনুক। তিনি সবধরনের গান গাইতে চান—র‍্যাপ, হিপহপ, সাইফার, অ্যাফ্রো পিয়ানো—তিনি নিজেকে কোনো গণ্ডিতে আটকে রাখতে চান না।

গান লেখার সময় জারা নিজেকে প্রশ্ন করেন, “আমি এমন কী বললে মানুষ সত্যি করে ভাববে?” তাঁর গানগুলো এমনভাবে লেখা যাতে তা শ্রোতার মনে দাগ কাটে।

তবে শুধুমাত্র হালাল র‍্যাপ করেও তাঁকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। কেউ কেউ মন্তব্য করেন, “এসব বাদ দিয়ে রান্নাঘরে যাও।” সেই অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি একটি গান লেখেন—“হ্যাঁ, আমি রান্নাঘরে যেতে পারি, কিন্তু আমি আরও অনেক কিছুই করতে পারি।” নেতিবাচক মন্তব্যগুলোকেও তিনি ইতিবাচক বার্তায় রূপ দেন।

র‍্যাপে আগ্রহী নতুনদের উদ্দেশে জারার পরামর্শ, “নিজের নীতি বা মূল্যবোধ বিসর্জন দিয়ো না। শুধু জনপ্রিয়তা বা টাকার জন্য নিজের আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ো না। আমার কাছেও বড় অঙ্কের অফার এসেছে, কিন্তু আমি মানসিকভাবে স্বস্তি পাই না এমন কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। সফল হতে নারীর নিজের আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে হবে—এই ধারণা ভুল। হয়তো সময় একটু বেশি লাগবে, কিন্তু সঠিক পথেই থাকবে তুমি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *