অস্ত্রসমর্পণের গুজব নাকচ করল হিজবুল্লাহ

আন্তর্জাতিক

ইরান-সমর্থিত লেবানিজ সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা অস্ত্র সমর্পণ করবে না। গত শুক্রবার হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীর উপপ্রধান নাঈম কাশেম বলেন, ইসরায়েলের আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তারা কোনো আলোচনা করতে প্রস্তুত নয়।

বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনা পুরোপুরি প্রত্যাহার না করা এবং লেবাননের আকাশসীমায় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান প্রবেশ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তাদের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকবে। নাঈম কাশেম বলেন, “হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের অস্ত্র কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এই অস্ত্র লেবাননের মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার প্রতীক। যখন আমাদের আকাশে শত্রুর বিমান উড়ছে আর দক্ষিণ অঞ্চল তাদের দখলে, তখন আলোচনার কথা বলার কোনো যৌক্তিকতা নেই।”

কাশেম আরও বলেন, এই পরিস্থিতিতে আলোচনায় বসা মানেই আত্মসমর্পণ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “আগে ইসরায়েল সেনা সরিয়ে নিক, তারপর আলোচনা সম্ভব। তার আগে নয়।”

এর আগে গত ৮ এপ্রিল রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, হিজবুল্লাহ অস্ত্র সমর্পণ নিয়ে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছে বলে এক জ্যেষ্ঠ নেতার বরাতে দাবি করা হয়েছিল। তবে, ওই খবরে নেতার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি এবং হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি।

হিজবুল্লাহর প্রধান নাঈম কাশেম বলেন, পাঁচ মাস আগে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়েছিল, তা হিজবুল্লাহ মেনে চলেছে। কিন্তু ইসরায়েল একাধিকবার এই চুক্তি লঙ্ঘন করে হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, যুদ্ধবিরতির পরেও ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে ৭১ জন বেসামরিক নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৪ জন নারী ও শিশু।

২০২৩ সালের ২৯ অক্টোবর ইসরায়েলি হামলায় হিজবুল্লাহর সাবেক প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ এবং তাঁর উত্তরসূরি হাশেম শাফিদ্দিন নিহত হওয়ার পর সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন নাঈম কাশেম।

ইসরায়েলের ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় আগ্রাসনের পর হিজবুল্লাহ ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে রকেট হামলা চালায়। তাদের ভাষায়, গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতার প্রতিবাদ করা তাদের নৈতিক, মানবিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। এর জের ধরে ইসরায়েল লেবাননে স্থল অভিযান শুরু করে, যা এখনও চলছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার লেবানিজ নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এই যুদ্ধে লেবাননের অবকাঠামোগত ক্ষতির পরিমাণ এতটাই বেশি যে পুনর্গঠন করতে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *