ঢাকা ছাড়ার জন্য পুলিশের আবেদন বেড়েই চলেছে

জাতীয় বাংলাদেশ

এক সময় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)–এ নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যদের জন্য ছিল গর্বের বিষয়। ডিএমপিতে যোগ দেওয়ার জন্য সদস্যরা চেষ্টা-তদবির, সুপারিশ থেকে শুরু করে নানা উপায়ে চেষ্টা করতেন। কিন্তু সময় পাল্টেছে। এখন ডিএমপিতে কর্মরত অনেক কনস্টেবল, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ও উপপরিদর্শক (এসআই) ঢাকা ছাড়ার জন্য বদলি চেয়ে আবেদন করছেন। পুলিশ সদর দপ্তরে ইতিমধ্যে ডিএমপি থেকে ঢাকার বাইরে বদলির জন্য সাড়ে সাত হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে—যা এক ধরনের ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব সদস্যদের দাবি, ডিএমপিতে কর্মের চাপ এবং মানসিক চাপ বর্তমানে অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে। এ কারণেই তাঁরা রাজধানীর বাইরে অপেক্ষাকৃত স্বস্তির পরিবেশে কাজ করতে চান।

এই পরিস্থিতিতে পুলিশ সদর দপ্তর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কনস্টেবল, এএসআই ও এসআইদের বদলির সব আবেদন আপাতত বাতিল করা হবে। পাশাপাশি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ডিএমপি থেকে কাউকে এখনই অন্যত্র সরানো যাবে না। যদিও তদবির ও আবেদন চালু রয়েছে আগের মতোই।

সূত্র আরও জানায়, গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন ও ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর রাজধানীতে পুলিশের উপর হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় সদস্যদের মনোবলে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানাসহ পুলিশ স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ও ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে নিরাপত্তা-সংকট ও মানসিক ক্লান্তি তৈরি করেছে।

পরবর্তী সময়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন ৫৪ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হন, সহস্রাধিক সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়, ডিএমপিতে হয় রদবদল। এই সময়ে রাজধানীতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলনও বাড়ে। গত জুলাই থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত অন্তত ১৭৯টি কর্মসূচি হয়েছে। এক দিনে একসঙ্গে ১৭টি জায়গায় আন্দোলনও হয়েছে, যা পুলিশকে দফায় দফায় দায়িত্ব পালনে বাধ্য করেছে—প্রায়ই দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করতে হয়েছে।

পিওএম শাখার এক সদস্য, যিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন—এই অবস্থা আর ভালো লাগছে না। প্রতিদিন আন্দোলন, চাপ, পরিবার থেকে উদ্বেগ—সব মিলিয়ে এখন ঢাকায় চাকরি মানেই একরকম মানসিক যন্ত্রণার নাম।

ডিএমপিতে বর্তমানে অনুমোদিত জনবল প্রায় ৩৩ হাজার। এসব সদস্যদের মধ্যে ৫ আগস্টের ঘটনার পর অন্য জেলায় বদলি হয়ে আসা অনেকেই এখন ঢাকায় থাকতে অনাগ্রহী।

অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সাড়ে সাত হাজারের বেশি সদস্য বদলি চেয়ে আবেদন করেছেন, যাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই কনস্টেবল ও এএসআই। এর বাইরেও অন্যান্য বিভাগ ও ইউনিট থেকেও অনেক আবেদন জমা পড়েছে।

১২ মার্চ ও ১৯ মার্চ, দুই দফায় ডিআইজি কাজী মো. ফজলুল করিমের স্বাক্ষরে সব বদলি আবেদন বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে জানানো হয়, কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত পদে যারা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের আবেদন ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর নয়। পিআরএল-এ যাওয়ার আবেদন ছাড়া অন্য কোনো বদলি বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে বদলি চাইলেও নতুন করে আবেদন করতে হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের প্রশাসন বিভাগ বলছে, এত সংখ্যক বদলির আবেদন স্বাভাবিক ঘটনা। তবে একসঙ্গে এতো বদলি হলে বিভিন্ন ইউনিটে জনবল ঘাটতি তৈরি হবে—তাই সব আবেদন যাচাই-বাছাই করে সময় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে বাস্তবতা বলছে, ঢাকায় দায়িত্ব পালনে এখন আর আগের মতো আকর্ষণ বোধ করছেন না অনেক পুলিশ সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *