ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ দমনে হোয়াইট হাউসের দেওয়া শর্ত মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত ২ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা কাঠামো, নিয়োগ প্রক্রিয়া ও ভর্তি নীতিমালায় পরিবর্তনের দাবি জানানো হয়, যাতে ইসরায়েলবিরোধী বা ইহুদিবিরোধী মনোভাব ঠেকানো যায়। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার দায়ভার নিতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকেই।
দাবিপত্রে বিশ্ববিদ্যালয়কে ১০টি শর্ত মানার কথা বলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব পোষণ করা শিক্ষার্থীদের রিপোর্ট করা, মতবৈচিত্র্য নিশ্চিত করা, ‘ইহুদিবিরোধী হয়রানির’ অভিযোগ তদন্তে নিরপেক্ষ বাহ্যিক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া, পূর্ববর্তী বিক্ষোভে যারা নিয়ম লঙ্ঘন করেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনা এবং ডাইভার্সিটি, ইকুইটি ও ইনক্লুশন (ডিইআই) সম্পর্কিত সব কার্যক্রম বন্ধ করা।
তবে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ ট্রাম্প প্রশাসনের এসব শর্ত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, এই ধরনের হস্তক্ষেপ তাদের স্বাধীনতায় আঘাত এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীমা অতিক্রম করার একটি নিদর্শন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেন, হার্ভার্ড প্রশাসনকে আইনগতভাবে জানিয়ে দিয়েছে, তারা শর্তগুলো মানবে না এবং নিজের সংবিধানিক অধিকার ও নীতিমালাকে অক্ষুণ্ন রাখবে।
গারবারের এই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই মার্কিন শিক্ষা বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২০ কোটি ডলারের তহবিল স্থগিত করে এবং অতিরিক্ত ৬০ মিলিয়ন ডলারের আরেকটি চুক্তিও বাতিল করা হয়।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে, অভিযোগ তুলেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে বাক্স্বাধীনতা ও শিক্ষার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের। উল্লেখ্য, এর আগেও হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিল। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে কংগ্রেস শুনানিতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লডিন গে’র বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয় এবং এক মাস পর তিনি পদত্যাগ করেন।
তবে এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগে, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ৪০০ মিলিয়ন ডলারের তহবিলও একই ধরনের অভিযোগে স্থগিত করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন। বর্তমানে হার্ভার্ডের আরও কয়েক শ কোটি ডলারের দীর্ঘমেয়াদি অনুদান ও চুক্তিও ঝুঁকিতে রয়েছে।