ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব আইওয়ার একদল গবেষক। তাঁরা ডিএনএ মেরামতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রোটিন, ‘আরএডি ৫২’-তে এক নতুন ও অপ্রত্যাশিত গঠন আবিষ্কার করেছেন, যা ক্যানসার কোষকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।
**নেচার জার্নালে** প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, এই নতুন গঠনকে লক্ষ্য করে আরএডি ৫২-ভিত্তিক নতুন ধরনের ওষুধ তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব আইওয়ার কারভার কলেজ অব মেডিসিনের অধ্যাপক মারিয়া স্পাইস।
তিনি বলেন, আরএডি ৫২ ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। কারণ, এই প্রোটিনটি সাধারণ কোষের জন্য অতটা জরুরি না হলেও, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ক্যানসার কোষ টিকে থাকার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত, মানবদেহে ডিএনএ মেরামতের জন্য একাধিক সিস্টেম থাকে। তবে যেসব ক্যানসার কোষে **BRCA1** বা **BRCA2** জিনের ত্রুটি থাকে, সেখানে এই সিস্টেমগুলো কাজ করে না। এ ধরনের সমস্যা স্তন, ডিম্বাশয়, প্রোস্টেট এবং মস্তিষ্কের ক্যানসারে দেখা যায়।
যখন প্রথাগত ডিএনএ মেরামত পদ্ধতি ব্যর্থ হয়, তখন ক্যানসার কোষগুলো বিকল্প পথে, অর্থাৎ আরএডি ৫২-র ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। গবেষকেরা মনে করছেন, যদি এই প্রোটিনকে লক্ষ্য করে ওষুধ তৈরি করা যায়, তাহলে ক্যানসার কোষগুলোর ডিএনএ মেরামত ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাবে এবং তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, এরই মধ্যে কিছু অণু শনাক্ত করা হয়েছে যা আরএডি ৫২-কে বাধা দিতে পারে। এসব অণুর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমোথেরাপির তুলনায় অনেক কম এবং এগুলো ক্যানসার কোষ ধ্বংসে কার্যকর।
আরএডি ৫২-এর গঠন পর্যবেক্ষণের জন্য গবেষকেরা ব্যবহার করেছেন উন্নত প্রযুক্তি **ক্রায়ো-ইলেকট্রন মাইক্রোস্কপি (Cryo-EM)**, যা অত্যন্ত স্পষ্ট ৩ডি চিত্র তৈরি করতে সক্ষম। এই পদ্ধতিতে দেখা গেছে, আরএডি ৫২ আসলে একটি নয়, বরং দুটি রিংয়ের সমন্বয়ে গঠিত, যার প্রতিটিতে থাকে ১১টি প্রোটিন উপাদান। এই রিংগুলো ডিএনএর ‘রিপ্লিকেশন ফর্ক’-কে ঘিরে রাখে—যেখানে ডিএনএ কপি হয়। এতে ডিএনএর ভাঙন ঠেকানো যায় এবং ক্যানসার কোষ টিকে থাকতে পারে।
গবেষকেরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে আরও দেখেছেন, একক অণুর স্তরে আরএডি ৫২ ডিএনএর সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করে চলাফেরা করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অবস্থান পরিবর্তন করে। এই গতিশীল আচরণই ক্যানসার কোষের টিকে থাকার অন্যতম কৌশল হতে পারে।
আরএডি ৫২ প্রোটিনের গঠন জানার পর গবেষকেরা এখন এমন ওষুধ তৈরিতে আশাবাদী, যা এই প্রোটিনের নির্দিষ্ট অংশকে টার্গেট করে কাজ করবে। ইতিমধ্যে তাঁদের হাতে কিছু ছোট অণু রয়েছে যেগুলো আরএডি ৫২-এর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারে। ভবিষ্যতে এসব অণু আরও উন্নত করে ক্যানসার চিকিৎসার এক নতুন দিক উন্মোচনের লক্ষ্যে কাজ চলছে।
এই আবিষ্কার **BRCA-সম্পর্কিত ক্যানসার রোগীদের** জন্য কম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার, আরও কার্যকর ওষুধ তৈরি এবং চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।