অস্থির মার্কিন বাজার, জনগণকে শক্ত থাকতে বললেন ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের নতুন শুল্কে অস্থির মার্কিন বাজার, জনগণকে ধৈর্য ধরার আহ্বান

বিশ্বের শতাধিক দেশে আমদানি পণ্যের ওপর নতুন শুল্ক কার্যকরের পর যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মার্কিন নাগরিকদের ধৈর্য ও মনোবল বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

গত শনিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক কার্যকর হয়েছে। এতে মার্কিন বাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একে ‘অর্থনৈতিক বিপ্লব’ হিসেবে দেখছেন।

নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ দেওয়া এক বার্তায় তিনি লেখেন, “আপনারা ধৈর্য ধরুন, শক্ত থাকুন। এই যাত্রা সহজ হবে না, কিন্তু ফলাফল হবে ঐতিহাসিক। জয় যুক্তরাষ্ট্রেরই হবে।”

তবে ট্রাম্পের আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না অনেক মার্কিন নাগরিক। নতুন শুল্কনীতি ও বাজারে ধসের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তে হাজার হাজার মানুষ ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।

গত বুধবার (২ মার্চ) পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর মাত্র দুদিনের মাথায়, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি প্রধান শেয়ারবাজার সূচকই ৫ শতাংশের বেশি হারে পতন ঘটায়। এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচক কমেছে ৬ শতাংশ পর্যন্ত, যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজারের সবচেয়ে খারাপ সপ্তাহ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই অস্থিরতা শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নয়। বিশ্ববাজারেও এর প্রভাব স্পষ্ট। যুক্তরাজ্যের FTSE 100 সূচক ৫ শতাংশ পড়ে গেছে, যা ২০২০ সালের পর সবচেয়ে বড় পতন। জার্মানি, ফ্রান্স, এমনকি এশিয়ার বাজারগুলোতেও একই ধরনের ধাক্কা লেগেছে।

অর্থনীতিবিদদের উদ্বেগের মধ্যেই আগামী ৯ এপ্রিল ট্রাম্পের আরও একটি নতুন শুল্কপ্যাকেজ কার্যকর হওয়ার কথা। নতুন ঘোষণায় তিনি জানিয়েছেন, যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য ঘাটতির জন্য দায়ী, তাদের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। এর আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপরও ২০ শতাংশ শুল্ক বসানো হবে।

তবে ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই)’–এর প্রধান ইলন মাস্ক এক ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। তিনি মনে করেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি ‘শূন্য শুল্ক অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা হতে পারে, যা একটি কার্যকর মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল হিসেবেও কাজ করতে পারে।

এদিকে চীনও পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর তারা ৩৪ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে এবং এই বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) অভিযোগও দাখিল করেছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধ ও পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা ভবিষ্যতে আরও জটিল অর্থনৈতিক সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *