রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রায় কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবারের মতো আজ বুধবারও ঢাকার বাতাস অস্বাস্থ্যকর রয়ে গেছে।
আজকের (বুধবার) বিশ্বব্যাপী বায়ুদূষণের সূচকে ১২৫টি দেশের মধ্যে ঢাকা পঞ্চম স্থানে রয়েছে, যা গতকালও একই অবস্থানে ছিল। মঙ্গলবার সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ১৮৩, যা আজ সকাল ৮টা ২৩ মিনিটে কিছুটা কমে ১৭৯ হয়েছে। যদিও এই মান অস্বাস্থ্যকর বাতাসের সীমার মধ্যেই পড়ে।
একিউআই অনুযায়ী, আজ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে ভারতের দিল্লি (২২৯) শীর্ষে রয়েছে, এর পরেই রয়েছে মুম্বাই (১৯৫)। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে আছে যথাক্রমে পোল্যান্ডের ওয়ারস (১৯৩) ও নেপালের কাঠমান্ডু (১৯০)।
আইকিউএয়ারের ২০২৪ সালের ১২ মার্চ পর্যন্ত রেকর্ডকৃত তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, আর প্রথম স্থানে আছে আফ্রিকার দেশ চাদ। গত বছরও সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও চাদ শীর্ষে ছিল।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার নিয়মিতভাবে একিউআই বিশ্লেষণ করে বায়ু পরিস্থিতির প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের তথ্যমতে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণা (PM2.5) দূষণের মূল কারণ। এই দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের মতো জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মানদণ্ড অনুযায়ী, একিউআই সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বাতাস বিশুদ্ধ বলে বিবেচিত হয়। ৫১-১০০ হলে সহনীয়, ১০১-১৫০ হলে সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীর (শিশু ও বয়স্ক) জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর, ২০১-৩০০ হলে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০০-এর বেশি হলে তা ভয়াবহ দূষিত বলে গণ্য হয়।
বায়ুদূষণের ফলে প্রতি বছর বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (BMJ) প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে সৃষ্ট বায়ুদূষণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। অন্যদিকে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গৃহস্থালি ও পরিবেশগত দূষণের সম্মিলিত প্রভাবে প্রতি বছর প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বাতাস চরম দূষিত থাকার কারণে বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। বিশেষ করে সংবেদনশীল জনগোষ্ঠীকে (শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ ব্যক্তিরা) জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এছাড়া, ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মালিকদের কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা এবং পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো বা ধোঁয়া ছড়ানো যানবাহন রাস্তায় নামতে না দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।