রেল সংকটে খালাসে জট, কনটেইনারের চাপে চট্টগ্রাম বন্দর

জাতীয়

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট: রেল সংকটে খালাসে বিপর্যয়

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনারের জট এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, বিশেষ করে ঢাকার কমলাপুর আইসিডিগামী কনটেইনারগুলোর ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ট্রেনের ইঞ্জিন সংকটের কারণে নির্ধারিত সময়ে মালপত্র খালাস করা সম্ভব হচ্ছে না, ফলে আইসিডি ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি হয়ে গেছে। ৮৭৬ টিইইউএস সক্ষমতার ইয়ার্ডে বর্তমানে রয়েছে ১,১৬২ টিইইউএস কনটেইনার, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪৬ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হলেও, জট কাটছে না। দুই সপ্তাহ আগে এই সংখ্যা ছিল ১,৭১১ টিইইউএস, যা ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে আমদানিকারকদের সতর্ক করে দিয়েছে যে, দ্রুত পণ্য খালাস না করলে ১০ মার্চ থেকে চারগুণ স্টোরেজ চার্জ আদায় করা হবে। ২০ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ৯ মার্চের মধ্যে কনটেইনার খালাস করতে হবে, নইলে অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হবে। ব্যবসায়ীরা বিষয়টিকে চাপ হিসেবে দেখলেও, বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায় যে, অব্যবস্থাপনা এড়াতে এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে তারা।

কাস্টমসের বিকল্প ব্যবস্থাপনা

এই সংকট নিরসনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যাতে বলা হয়েছে, আমদানিকারকরা আগামী দুই বছর চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস বা পানগাঁও কাস্টম হাউসে শুল্ক পরিশোধ করে কনটেইনার খালাস নিতে পারবেন। সাধারণত কনটেইনারগুলো ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে পৌঁছানোর পর শুল্ক পরিশোধ করা হয়ে থাকে, তবে এখন সরাসরি চট্টগ্রাম বা পানগাঁও থেকে খালাসের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, বিকল্প ব্যবস্থাপনা কার্যকর হলে চাপ কিছুটা কমবে, তবে ট্রেন সংকটের সমাধান না হলে পুরো সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।

ট্রেন সংকট এবং বন্দরের উদ্বেগ

বন্দর কর্তৃপক্ষের মতে, দ্রুত কনটেইনার খালাস না হলে পুরো বন্দরের কার্যক্রম ভেঙে পড়তে পারে। রমজানের বাজারে নতুন আমদানিকৃত মালপত্র ঢুকবে, কিন্তু এই সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা সময়মতো পণ্য খালাস করতে পারছেন না। সাধারণ সময়ে রেলওয়ে প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে কনটেইনার পরিবহন করত, তবে এখন ট্রেনের ইঞ্জিন সংকটের কারণে এই সংখ্যা তিনটি হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রতিদিন ১০০-১২০টি কনটেইনার পরিবহন হচ্ছে, কিন্তু কনটেইনারের জট কমাতে হলে প্রতিদিন ২০০টির বেশি কনটেইনার পরিবহন করা জরুরি, ব্যবসায়ীরা এমন মত ব্যক্ত করেছেন।

বন্দর কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ের মতামত

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানিয়েছেন, কনটেইনারের জট কমানোর জন্য তারা রেলওয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিদিন চারটি ট্রেন চেয়েছি, কিন্তু তারা এখন তিনটি চালাচ্ছে। তবে এর ফলে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যদি আরও একটি ট্রেন সংযোজন করা যায়, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হবে।”

রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) ওয়াহিদুর রহমান জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে ইতিমধ্যে তিনটি ট্রেন চালানো হচ্ছে এবং দু-এক দিনের মধ্যে আরও একটি চালু করা হবে।

ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা ও সম্ভাব্য সমাধান

ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন, কারণ কনটেইনার খালাসের দ্রুত ব্যবস্থা না হলে সরবরাহ চেইন ব্যাহত হতে পারে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়তে পারে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বহির্নোঙরে আরও অনেক কনটেইনার এসে পৌঁছেছে, যার মধ্যে ঢাকার আইসিডিগামী কনটেইনারও রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বন্দর পরিচালনা স্বাভাবিক রাখতে আরও কনটেইনার ট্রেন চালু করার প্রয়োজনীয়তা মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এই সংকট সমাধানে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজারসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে রেলওয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইঞ্জিন সংকট কাটিয়ে উঠতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *