নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের জন্য প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

Uncategorized

প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রক্সি ভোটের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে প্রক্সি ভোটের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আজ মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

ইসি সানাউল্লাহ উল্লেখ করেন, গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, এবার প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে। শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতি নয়, বাস্তবায়নের দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে। সেই নির্দেশনার আলোকে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট কমিটিকে একটি প্রস্তাব তৈরি করার দায়িত্ব দিয়েছে।

এরপর বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এবং সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করা হয়। ৩৪টি দেশে অবস্থিত ৪৪টি মিশনের মাধ্যমে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা হয়—প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা, মিশনগুলোর সুপারিশ এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ভোটিং ব্যবস্থা। এতে অনলাইন ভোটিং, সরাসরি ভোট এবং পোস্টাল ব্যালটের বিষয়ে মতামত উঠে আসে। তবে পোস্টাল ব্যালট ব্যবস্থা সময়সাপেক্ষ হওয়ায় তা কার্যকর নয় বলে উল্লেখ করা হয়। গত সংসদ নির্বাচনে দেশে ৪৩৩টি ভোট পড়লেও প্রবাসীরা ভোট দিতে পারেননি, কারণ এই পদ্ধতিতে প্রায় ৪০ দিন লেগে যায়, যেখানে প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর হাতে থাকে মাত্র ১৫ দিন।

কমিটি তিনটি পদ্ধতি সুপারিশ করেছে—পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং এবং প্রক্সি ভোট। তবে অনলাইন ভোটিং এখনো তেমন জনপ্রিয় হয়নি। প্রক্সি ভোটের মাধ্যমে প্রবাসী ভোটারদের হয়ে তাদের নিজ এলাকার নির্ধারিত কেউ ভোট দিতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, যদি সত্যিই প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে হয়, তাহলে প্রক্সি ভোটিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। বিশ্বের কয়েকটি দেশে এই পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে, যেমন ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ভারতে এটি কেবল সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের জন্য সীমিত। প্রক্সি ভোটিংয়ের সুবিধা হলো, এটি প্রচলিত একটি ব্যবস্থা, যেমন পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে সম্পত্তি বিক্রি করা যায়, তেমনি ভোটও একটি অধিকার, যা এভাবে প্রয়োগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশেও প্রতিবন্ধী ভোটারদের ক্ষেত্রে অন্য কেউ ভোট দিতে পারেন, যদিও এটিকে সরাসরি প্রক্সি ভোটের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না।

প্রক্সি ভোট দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য উল্লেখ করে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, আগামী ৮ বা ৯ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে একটি কর্মশালা আয়োজন করা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং এমআইএসটি-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের এতে সম্পৃক্ত করা হবে। এছাড়া সংস্কার কমিশনের বিশেষজ্ঞ, ইসির সাবেক কর্মকর্তারা এবং এনজিও প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই কর্মশালার মাধ্যমে তিনটি ভোটিং পদ্ধতির একটি উপযুক্ত আর্কিটেকচার তৈরি করা হবে। এরপর রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এই ব্যবস্থা চালু করতে হলে বিদ্যমান আইনে সংশোধন আনতে হবে।

প্রবাসী ভোটারদের তথ্য সংরক্ষিত আছে কি না, এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রকৃত সংখ্যা জানা না থাকলেও ৪৪টি মিশনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী প্রায় ১ কোটি ৩২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ ভোটার হিসেবে গণ্য হলে প্রায় ১ কোটি ভোটার হতে পারে।

ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত প্রবাসীরাই ভোট দিতে পারবেন বলে জানান তিনি। এ জন্য ৪০টি দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চালানো হবে, যদিও আসন্ন নির্বাচনের আগে কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, প্রক্সি ভোটিং ব্যবস্থা বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো, এ সংক্রান্ত কোনো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পদ্ধতি বর্তমানে আমাদের হাতে নেই। তাই নতুন একটি ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। নির্বাচন সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে কিছু সুপারিশ দিয়েছে, যা কার্যকর করার জন্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *