গত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশে ৫৯৬টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যেখানে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৭৮ জন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ১,৩২৭ জন। এই সময়ে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলের, যার সংখ্যা ২৪১টি। এতে নিহত হয়েছেন ২২৭ জন, যা সড়ক দুর্ঘটনায় মোট প্রাণহানির ৩৯.২৭ শতাংশ এবং মোট দুর্ঘটনার ৪০.৪৩ শতাংশ।
শনিবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশন তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে এই পরিসংখ্যান উঠে এসেছে। সংগঠনটি ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং নিজেদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে, যেখানে ২০৫টি দুর্ঘটনায় ১৯৮ জন নিহত হয়েছেন। বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা সবচেয়ে কম, যেখানে ৩৪টি ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন। জেলা পর্যায়ে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ৪১টি দুর্ঘটনায় ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর মৌলভীবাজার জেলায় দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি হয়নি। রাজধানী ঢাকায় ৩৪টি দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত এবং ৩৬ জন আহত হয়েছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জানুয়ারি মাসে ৬২১টি দুর্ঘটনায় ৬০৮ জন নিহত হয়েছিলেন, অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ১৯.৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক গড় মৃত্যু বেড়ে হয়েছে ২০.৬৪ জন, যা ৫.২৫ শতাংশ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অধিকাংশ দুর্ঘটনার মূল কারণ অতিরিক্ত গতি, যার ফলে চালকেরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। এই প্রবণতা রোধে প্রযুক্তির মাধ্যমে গতি পর্যবেক্ষণ এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে। বেপরোয়া যানবাহন চলাচল এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের সংখ্যাও বাড়ছে, যা ঠেকাতে সরকারি পর্যায়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচারণার সুপারিশ করা হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মো. সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, পরিবহন চালকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধার অভাব, যেমন নির্দিষ্ট নিয়োগপত্র, বেতন এবং কর্মঘণ্টা নির্ধারণ না থাকায় তাঁদের শারীরিক ও মানসিক অবস্থা বিপর্যস্ত থাকে। এ কারণে তাঁরা অসচেতন ও বেপরোয়া হয়ে যানবাহন চালান, যা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে হলে শ্রমিকদের পেশাগত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা এবং পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো জরুরি বলে তিনি মনে করেন।