মহাকাশের ৪৫ কোটি গ্যালাক্সির মানচিত্র তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কক্ষপথে নতুন টেলিস্কোপ পাঠাতে যাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ‘স্ফিয়ারএক্স’ নামের এই টেলিস্কোপ মহাবিশ্বের গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে আরও গভীর অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করবে এবং মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উন্মোচন করবে।
নাসার ‘স্ফিয়ারএক্স’ মিশন (স্পেকট্রো-ফটোমিটার ফর দ্য হিস্ট্রি অব দ্য ইউনিভার্স, এপোক অব রিইওনাইজেশন অ্যান্ড আইসেস এক্সপ্লোরার) এই মহাকাশ মানচিত্র তৈরির পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেবে। টেলিস্কোপটি মহাকাশে দুই বছরের জন্য পাঠানো হবে এবং এই সময়ের মধ্যে এটি চারবার পুরো মহাবিশ্বের মানচিত্র তৈরি করবে।
নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিভাগের কার্যক্রম পরিচালক শওন ডোমাগাল-গোল্ডম্যান জানিয়েছেন, এই মিশন মহাবিশ্বের গভীর প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে সহায়ক হবে, যেমন—‘আমরা এখানে কীভাবে এলাম?’
আগামী বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে স্ফিয়ারএক্স মহাকাশযানটি ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যানডেনবার্গ স্পেস ফোর্স বেস থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি মূলত ২৭ ফেব্রুয়ারি উৎক্ষেপণের কথা ছিল, তবে যন্ত্রের প্রস্তুতি ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য উৎক্ষেপণ পিছিয়ে দেওয়া হয়।
চোঙ্গা আকৃতির এই মহাকাশযানটি স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপিত হবে। এর সঙ্গে চারটি সুটকেস আকৃতির স্যাটেলাইটও পাঠানো হবে, যেগুলো পৃথক একটি মিশনে সূর্য নিয়ে গবেষণা করবে।
প্রায় ৪৮৮ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে পরিচালিত এই মিশন ইনফ্রারেড প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের ১০২টি বিভিন্ন রঙের মানচিত্র তৈরি করবে, যা এর আগে কখনো করা হয়নি। ইনফ্রারেড যন্ত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ধূলিকণা ও গ্যাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রাচীন নক্ষত্র ও গ্যালাক্সিগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন, যা সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা সম্ভব নয়।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং স্ফিয়ারএক্স মিশনের প্রধান গবেষক জেমি বক জানিয়েছেন, এই টেলিস্কোপ আকাশের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করবে এবং গ্যালাক্সির বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করবে।
তিনি আরও জানান, এই গবেষণা গ্যালাক্সির গঠন সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে এবং মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে পানি ও অন্যান্য জৈব পদার্থের উৎপত্তি অনুসন্ধানে সহায়ক হবে। এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা শুধু পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি নয়, বরং মহাবিশ্বের অন্য কোথাও জীবন সৃষ্টির সম্ভাবনাও মূল্যায়ন করতে পারবেন।
এছাড়া, স্ফিয়ারএক্স মিশন মহাবিশ্বের গঠন এবং বিগ ব্যাংয়ের পরপরই ঘটে যাওয়া ‘কসমিক ইনফ্লেশন’ সম্পর্কেও নতুন তথ্য সরবরাহ করতে পারে। কসমিক ইনফ্লেশন তত্ত্ব অনুযায়ী, বিগ ব্যাংয়ের পর এক মুহূর্তের মধ্যে মহাবিশ্ব ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন গুণ সম্প্রসারিত হয়।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন ধরে এই কসমিক ইনফ্লেশন কীভাবে ঘটেছিল এবং এর পেছনে কী শক্তি কাজ করেছিল, তা বোঝার চেষ্টা করছেন। স্ফিয়ারএক্স মিশন লক্ষাধিক গ্যালাক্সির সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করে এই তত্ত্বের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নাসার অ্যাস্ট্রোফিজিক্স বিভাগের অস্থায়ী পরিচালক ডোমাগাল-গোল্ডম্যান জানিয়েছেন, স্ফিয়ারএক্স মিশনের মাধ্যমে গ্যালাক্সির গঠন, মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও মৌলিক পদার্থবিদ্যার জ্ঞানে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।