অধ্যাপক সি আর আবরার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করলেন
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের নতুন সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন অধ্যাপক সি আর আবরার। বুধবার বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনি।
প্রথমে উপদেষ্টা হিসেবে এবং পরে গোপনীয়তার শপথ নেন সি আর আবরার। এরপর তিনি শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, আর অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই মাসে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানান, বর্তমানে শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ দীর্ঘদিন ধরেই দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব একসঙ্গে পালন করতে অসুবিধা অনুভব করছিলেন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় একটি মন্ত্রণালয়, ফলে একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করা তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল। এই প্রেক্ষাপটে সি আর আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের বর্তমান অবস্থা
২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর, ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়। পরবর্তী সময়ে কয়েক দফায় নতুন উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টাসহ মোট ২২ জন উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করছেন, সি আর আবরারের যোগদানের পর এই সংখ্যা বেড়ে ২৩ হবে।
এদিকে, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. নাহিদ ইসলাম, যিনি পরবর্তীতে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেন। তার পদত্যাগের পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় উপদেষ্টা মাহফুজ আলমকে।
অধ্যাপক সি আর আবরারের পরিচিতি
অধ্যাপক সি আর আবরার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন এবং পরে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
তিনি দীর্ঘ চার দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। পাশাপাশি মানবাধিকার বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষত, বাংলাদেশে আটকে পড়া উর্দুভাষী জনগোষ্ঠী (বিহারি) এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন তিনি।
অধ্যাপক আবরার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শরণার্থী ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। বিশেষত, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অভিন্ন অবস্থানের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত তিনি। এছাড়া, তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম, খুন ও নিপীড়নমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধেও সরব ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যমের প্রপাগান্ডামূলক ভূমিকাও তিনি স্পষ্টভাবে সমালোচনা করেছেন।
শিক্ষা ও গবেষণা
১৯৫২ সালের ১৭ আগস্ট ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করা অধ্যাপক আবরারের বাবা আবদুস সাত্তার চৌধুরী এবং মা সোফিয়া সুলতানা। তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর, যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন এবং পরে অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
১৯৭৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে আসা অধ্যাপক সি আর আবরার শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট – রামরু) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গবেষণা ও অবদান
তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট, স্বল্পমেয়াদি শ্রম অভিবাসী এবং বাংলাদেশে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছেন। অভিবাসন খাত, সামাজিক সুরক্ষা, এবং শরণার্থীদের অধিকার নিয়ে তার গবেষণা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ওয়েস্ট ভিউ প্রেস, ম্যাকমিলান ইন্ডিয়া এবং আর্থস্ক্যানের মতো সংকলনেও তার লেখা সংযোজিত হয়েছে।
অধ্যাপক আবরার বাংলাদেশে বসবাসকারী উর্দুভাষী তরুণদের নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন এবং এ বিষয়ে ক্যাম্প সংগঠিত করার নেতৃত্ব দিয়েছেন। এছাড়া, শ্রম নিয়োগ খাত ও শরণার্থী নীতির ক্ষেত্রে তার গবেষণা নীতি-নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।