আজ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা ৪০ দিনের ছুটি শুরু।

জাতীয় দেশজুড়ে বাংলাদেশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা ৪০ দিনের দীর্ঘ ছুটি

দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘ ছুটিতে যাচ্ছে। পবিত্র রমজান, ঈদুল ফিতর এবং অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে টানা ৪০ দিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, আজ রোববার (২ মার্চ) থেকে ছুটি শুরু হয়ে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। সরকারি ও বেসরকারি সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য এ ছুটি প্রযোজ্য।

রমজান মাস, শুভ দোলযাত্রা, স্বাধীনতা দিবস, জুমাতুল বিদা, শবে কদর ও ঈদুল ফিতরের ছুটি ২ মার্চ থেকে কার্যকর হবে এবং শেষ হবে ৮ এপ্রিল। এদিকে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ শুক্র-শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির ফলে শিক্ষার্থীদের শেষ ক্লাস হয়েছে ২৭ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার)। ফলে তারা মোট ৪০ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকবে।

এছাড়া, আগামী ১০ এপ্রিল থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরীক্ষার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে, সেগুলোর ছুটি আরও বাড়তে পারে।

ছুটির ঘোষণা ইতোমধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, এসএসসি পরীক্ষার ফাঁকে ফাঁকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন ক্লাস পরিচালনা করে, যাতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বিঘ্ন না ঘটে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এ বছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাপ্তাহিক ছুটি (শুক্র ও শনিবার) বাদে মোট ৭৮ দিন ছুটি থাকবে। প্রথম ছুটি হিসেবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৮ জানুয়ারি শবে মিরাজের ছুটি নির্ধারিত হয়েছে।

প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, পবিত্র রমজান মাসের ছুটি (চাঁদ দেখা সাপেক্ষে) ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে। ঈদুল ফিতর, জুমাতুল বিদা, শব-ই-কদর, স্বাধীনতা দিবস, জাতীয় দিবস এবং শ্রী শ্রী শিবরাত্রি ব্রতসহ অন্যান্য ছুটি মিলিয়ে টানা ২৮ দিন স্কুল বন্ধ থাকবে। দীর্ঘ এ ছুটির পর আগামী ৬ এপ্রিল থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুনরায় ক্লাস শুরু হবে।

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছুটির তালিকা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে, এবারের প্রথম ছুটি শবে মিরাজ উপলক্ষে নির্ধারিত হয়েছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এটি ২৮ জানুয়ারি পালন করা হবে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সাপ্তাহিক ছুটির (শুক্র ও শনিবার) বাইরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলো মোট ৭৬ দিন বন্ধ থাকবে।

প্রকাশিত তালিকা অনুসারে, দীর্ঘ ছুটিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পবিত্র রমজান মাসের ছুটি, যা চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ২ মার্চ থেকে শুরু হবে। এ সময় ঈদুল ফিতর, জুমাতুল বিদা, স্বাধীনতা দিবসসহ অন্যান্য ছুটির সমন্বয়ে বিদ্যালয়গুলো টানা ২৮ দিন বন্ধ থাকবে। এই ছুটির পর ৮ এপ্রিল থেকে পুনরায় শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে।

পবিত্র ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশের জন্যও বিদ্যালয়গুলো টানা ১৫ দিনের ছুটি পাবে, যা ১ জুন শুরু হয়ে ১৯ জুন পর্যন্ত চলবে।

এছাড়া, দুর্গাপূজার জন্য ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর পর্যন্ত আট দিনের ছুটি নির্ধারিত হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে লক্ষ্মীপূজা, ফাতেহা-ই-ইয়াজদহমসহ কয়েকটি ধর্মীয় ছুটিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রতিবছরের মতো এবারও প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের জন্য সংরক্ষিত তিন দিন ছুটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা প্রয়োজনে প্রদান করা যাবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত নিয়ম অনুসারে অতিরিক্ত ছুটি থাকবে।

কলেজের ছুটির তালিকা

চলতি বছরে দেশের কলেজগুলো মোট ৭১ দিন ছুটির আওতায় থাকবে। এর মধ্যে ২ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত পবিত্র রমজান, স্বাধীনতা দিবস, জুমাতুল বিদা, ঈদুল ফিতর ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ মিলিয়ে টানা ২৫ দিন কলেজ বন্ধ থাকবে।

শীতকালীন অবকাশ হিসেবে ১৪ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৪ দিন কলেজগুলো বন্ধ থাকবে। এছাড়া, ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম, দুর্গাপূজা ও বিজয়া দশমী উপলক্ষে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ১০ দিনের ছুটি নির্ধারিত হয়েছে।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৩ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত কলেজগুলো মোট ৮ দিন ছুটি পাবে।

অন্যদিকে, এ বছর সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট ৭৬ দিন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭৮ দিন এবং মাদ্রাসায় ৭৫ দিন ছুটি থাকবে।

মাদ্রাসার ছুটির তালিকা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এ বছর মাদ্রাসাগুলোতে মোট ৭৩ দিন ছুটি থাকবে। বছরের প্রথম ছুটি হিসেবে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) শবে মিরাজের ছুটি নির্ধারিত হয়েছে। এছাড়া, সাপ্তাহিক ছুটি হিসাবে প্রতি শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে।

ইবতেদায়ি ও দাখিল স্তরের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা তিন দিন আগেই শেষ করতে হবে, এবং নির্বাচনী পরীক্ষা ১৬ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হাওর অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের বোরো ধান কাটার সময় উপস্থিতি কমে যাওয়ায়, এসব এলাকার মাদ্রাসাগুলো নির্ধারিত ছুটির মধ্যেই ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি থেকে সমন্বয় করে ১০ দিনের জন্য পাঠদান বন্ধ রাখতে পারবে।

পবিত্র রমজান, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, জুমাতুল বিদা, লাইলাতুল কদর ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৩০ দিনের ছুটি নির্ধারিত হয়েছে।

ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি ১ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত চলবে। দুর্গাপূজা ও ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহমের জন্য ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি নির্ধারণ করা হয়েছে।

মহান বিজয় দিবস, যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিন ও শীতকালীন অবকাশ উপলক্ষে ১৪ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি থাকবে।

অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল ১২ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত প্রকাশ করতে হবে। নির্বাচনী পরীক্ষার ফল ১০ নভেম্বরের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে।

ছুটির তালিকার নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মকর্তার পরিদর্শন উপলক্ষে মাদ্রাসা বন্ধ রাখা যাবে না। সংবর্ধনা বা পরিদর্শনের কারণে ক্লাস বন্ধ করা যাবে না এবং শিক্ষার্থীদের রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করানো যাবে না।

এছাড়া, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস যেমন ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ক্লাস বন্ধ থাকবে। তবে এসব দিবসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক কার্যক্রম আয়োজন করে দিবসগুলো উদযাপন করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *