ঢাকার বায়ুদূষণ অব্যাহত, আজও অস্বাস্থ্যকর অবস্থায়
রাজধানী ঢাকার বাতাস আজও অস্বাস্থ্যকর রয়ে গেছে। শুক্রবারের তুলনায় আজ, শনিবার, দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় ঢাকার বায়ুমান সূচক (একিউআই) ২২৫ রেকর্ড করা হয়েছে।
বিশ্বের ১২৫টি দেশের মধ্যে আজ ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত শহর হিসেবে। শীর্ষস্থানে রয়েছে চীনের বেইজিং, যেখানে বায়ুমান সূচক ২৪৮। শীর্ষ পাঁচ দূষিত শহরের তালিকায় আরও রয়েছে উজবেকিস্তানের তাসখন্দ (১৯৪), ইরাকের বাগদাদ (১৮২) এবং ভারতের দিল্লি (১৬৯)।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান **আইকিউএয়ার** নিয়মিতভাবে বাতাসের মান বিশ্লেষণ করে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের মূল কারণ। এই মাত্রাতিরিক্ত দূষণ শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, হৃদ্রোগ এবং ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বায়ুমান সূচক ও দূষণের মাত্রা
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুসারে—
✅ **বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে** থাকলে তা বিশুদ্ধ বাতাস বলে বিবেচিত হয়।
✅ **৫১-১০০** এর মধ্যে থাকলে তা সহনীয়।
✅ **১০১-১৫০** হলে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের জন্য অস্বাস্থ্যকর।
✅ **১৫১-২০০** হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর।
✅ **২০১-৩০০** হলে বাতাস খুব অস্বাস্থ্যকর বলে ধরা হয়।
✅ **৩০০-এর বেশি হলে** তা বিপর্যয়কর দূষণ নির্দেশ করে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি ও সতর্কতা
বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ মারা যায়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে)** প্রকাশিত ২০২৩ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ প্রতি বছর প্রায় ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গৃহস্থালি ও পরিবেষ্টিত বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে প্রতি বছর ৬৭ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে।
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বাতাস অত্যন্ত দূষিত থাকায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়** বাইরে বের হলে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষত, সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
দূষণ কমানোর নির্দেশনা
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছে, যার মধ্যে রয়েছে—
– ইটভাটা ও শিল্পকারখানার মালিকদের কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা।
– নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা ও পানি ছিটানো।
– নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া।
– পুরোনো ও ধোঁয়া নির্গতকারী যানবাহন রাস্তায় না নামানো।
দূষণের ধারা অব্যাহত
ঢাকার বায়ুদূষণ কমার কোনো লক্ষণ নেই। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরের নভেম্বরে বায়ুর মান ১০% পর্যন্ত খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে, ডিসেম্বর মাসে ঢাকার বাতাস ছিল বছরের সবচেয়ে বেশি দূষিত।