জামায়াতের আমির: “আমাদের কর্মীরা বিশৃঙ্খল নয়, বরং দেশ গঠনে দায়িত্বশীল”
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “৫ আগস্টের পর আমাদের কর্মীরা কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেনি। বরং আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি এবং ইনশা আল্লাহ, দেশ গঠনের ক্ষেত্রেও আমরা একইভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেব।”
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নীলফামারীর ডোমার উপজেলা পরিষদের মাঠে জামায়াত আয়োজিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে মতামত
জামায়াতের আমির বলেন, “যদি বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হয়, তা গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আমি সাংবাদিকদের বলেছি, এটি হবে ‘গণতন্ত্র হত্যার নির্বাচন’। চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে, দেশ রক্তাক্ত হবে—এটি আমরা চাই না। আমরা চাই, নির্বাচন সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হোক, যাতে জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগ প্রায় ২ কোটি ভুয়া ভোটার তৈরি করেছিল। সেই ভুয়া ভোটারদের বাদ দিয়ে সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করা ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটের সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।”
বর্তমান প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের অবস্থা
ডা. শফিক দাবি করেন, “সরকার স্থানীয় প্রশাসনকে জনগণের জন্য অকার্যকর করে তুলেছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশন পর্যন্ত সব জায়গায় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। জনগণের দুর্ভোগ বাড়ছে, কারণ তারা তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি পাচ্ছে না।”
সমাজের সমস্যা ও যুবকদের ভবিষ্যৎ
জামায়াতের আমির বলেন, “বাংলাদেশের ৪০% জনগোষ্ঠী যুবক, কিন্তু তাদের ৬০% বেকার। কারণ বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা তাদের দক্ষ করে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যদি দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাই, তাহলে এমন ব্যবস্থা করব, যাতে শিক্ষাজীবন শেষ করার দিনই একজন শিক্ষার্থী চাকরির অফার লেটার হাতে পায়। আমরা বেকারত্ব দূর করব।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে রাজনীতিতে কালো টাকা ও পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য চলছে। অযোগ্য ব্যক্তিরা টাকা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে সংসদ সদস্য হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের সংসদে এমন প্রতিনিধি আছেন, যিনি এক পৃষ্ঠা পড়তে গিয়ে ২৮টি ভুল করেন! এ ধরনের প্রতিনিধিরা কীভাবে দেশের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন?”
শহীদ পরিবার ও রাজনীতি
তিনি বলেন, “আমরা শহীদদের নিয়ে রাজনীতি করতে চাই না, বরং তাদের সম্মানজনক অবস্থানে রাখতে চাই। আমরা প্রত্যেকটি শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। শহীদরা কোনো দলের সম্পদ নয়, তারা জাতির সম্পদ।”
দেশ গঠনে জামায়াতের ভূমিকা
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা ১৮ কোটি মানুষের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমরা জনগণের ভালোবাসা, সহায়তা ও সমর্থন চাই। আমাদের লড়াই ক্ষমতার জন্য নয়, বরং জনগণের মুক্তির জন্য, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কর্মীরা বিশৃঙ্খল নয়। বরং তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ, ধৈর্যশীল এবং দেশ গঠনে নিবেদিতপ্রাণ।”
“লড়াইয়ের ময়দানে আবার দেখা হবে, ইনশা আল্লাহ। তবে সেই লড়াই হবে জনগণের মুক্তির জন্য, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার জন্য।”