পাকিস্তান থেকে মার্চ মাসে আসছে ২৫ হাজার টন চাল।

জাতীয় বাংলাদেশ

বাংলাদেশে মার্চের শুরুতেই পাকিস্তান থেকে ২৫ হাজার টন চালের একটি চালান আসছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজকে। এর আগে, গত ১০ জানুয়ারি আতপ চাল আমদানির লক্ষ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

দীর্ঘদিনের টানাপোড়েনের পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নতির দিকে রয়েছে। গত আগস্টে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দুই দেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। এরই অংশ হিসেবে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় পাঁচ দশকের বিরতির পর এই চাল আমদানির মাধ্যমে সরকারিভাবে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নতুন করে শুরু হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রথম চালানে ২৫ হাজার টন চাল ৩ মার্চ বাংলাদেশে পৌঁছাবে। তিনি বলেন, “১৯৭১ সালের পর এই প্রথমবার সরকারিভাবে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানি করা হচ্ছে।”

এর আগে, পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের সূচনা হয় গত বছরের নভেম্বরে, যখন ১৯৭১ সালের পর প্রথমবারের মতো একটি পাকিস্তানি কার্গো জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে নোঙর করে। সে সময় আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত হয়।

নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আমেনা মহসিন মনে করেন, পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য পুনরায় শুরু করা বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমরা পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাই। বহুমুখী কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ভারতের সঙ্গে বর্তমান টানাপোড়েনের প্রেক্ষাপটে পাকিস্তান থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ।”

বাংলাদেশের বাজারে চালের সংকট মোকাবিলায় পাকিস্তান থেকে চাল আমদানির এই সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাম্প্রতিক বন্যা ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে দেশকে ব্যাপক পরিমাণে চাল আমদানি করতে হচ্ছে, যাতে বাজারে সংকট না দেখা দেয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রধান চাল আমদানির উৎস ভারত।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে চালের ঘাটতি রয়েছে। তাই প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিভিন্ন উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করা গুরুত্বপূর্ণ। নতুন উৎস হিসেবে পাকিস্তান ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।”

এর আগে, ১৪ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে সরকারিভাবে আতপ চাল আমদানির জন্য বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তর ও পাকিস্তানের ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তান (টিসিপি)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। আশা করা হচ্ছে, এই চুক্তি চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।

সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল খালেক এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব পাকিস্তানের চেয়ারম্যান সৈয়দ রাফিউ বশির শাহ। অনুষ্ঠানে খাদ্যসচিব মো. মাসুদুল হাসান, পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের স্পেশাল সেক্রেটারি শাকিল আহমেদ মাঙ্গনিজো এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফসহ উভয় দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *