জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত যমুনা সার কারখানা দীর্ঘ ১৩ মাস বন্ধ থাকার পর আবারও উৎপাদনে ফিরেছে। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কারখানায় সার উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়।
কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিতাস গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় গত ১৩ মাস ধরে সার উৎপাদন স্থগিত ছিল। তবে পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ায় রবিবার সন্ধ্যা থেকে ইউরিয়া সার উৎপাদন চালু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকার ফলে কারখানাটি প্রায় ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন ৪২ থেকে ৪৩ পিএসআই চাপের গ্যাস প্রয়োজন। কিন্তু তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাস সংকটের কারণে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় ২০২3 সালের ১৫ জানুয়ারি কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। ফলে শ্রমিক, কর্মচারী, পরিবহন মালিক-চালক, স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের আয়-রোজগারও বন্ধ হয়ে যায়।
কারখানার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় দেশে আমদানি করা এবং অন্যান্য কারখানায় উৎপাদিত ইউরিয়া সার সরবরাহ করা হলেও কৃষকদের মধ্যে এই সারের চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম ছিল, যা ডিলারদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে কারখানাটি পুনরায় চালুর দাবিতে শ্রমিক ও স্থানীয়রা একাধিকবার বিক্ষোভ ও আন্দোলন করেছেন।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত যমুনা সার কারখানার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১,৭০০ মেট্রিক টন। বিসিআইসির তালিকাভুক্ত ১,৯০০ ডিলারের মাধ্যমে কারখানাটি জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইলসহ ২১টি জেলার ১৬২ উপজেলার কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়া এবং কারিগরি সমস্যার কারণে উৎপাদন দৈনিক ১,২০০ মেট্রিক টনে নেমে আসে।
অবশেষে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ১৩ মাস পর পুনরায় গ্যাস সংযোগ প্রদান করলে কারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে।
যমুনা সার কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, “গ্যাস সরবরাহ পুনরায় শুরু হওয়ায় এলাকাবাসী অত্যন্ত আনন্দিত। দেশীয় শিল্প সচল থাকলে সার আমদানির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং রাজস্ব আয় বাড়বে।”
উল্লেখ্য, কারখানাটি প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম এত দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ ছিল। ২০২৩ সালে টানা ৭২ দিন বন্ধ থাকার পর ১৭ নভেম্বর চালু হলেও ৬০ দিন পর, ২০২৪ সালের ১৫ জানুয়ারি, আবারও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন স্থগিত হয়।