ফ্রান্সে ইমামতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলো

আন্তর্জাতিক

ফ্রান্স সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ইমামতিকে পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটিকে দেশটির কর্মসংস্থান সংস্থার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ সিদ্ধান্তের ফলে ইমামদের কাজকে একটি প্রতিষ্ঠিত ও কাঠামোবদ্ধ পেশা হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তাদের জন্য আনুষ্ঠানিক কর্মপরিকল্পনা ও চুক্তিভিত্তিক চাকরির ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।

তুরস্কের রাষ্ট্র পরিচালিত সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রেতাইয়ো এই ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক পদক্ষেপ যা প্রথমবারের মতো ফ্রান্সে ইমামের ভূমিকাকে সরকারি স্বীকৃতি দিল।’

রেতাইয়ো এই ঘোষণাটি ফরাসি ইসলাম ফোরামের (এফওআরআইএফ) দ্বিতীয় বৈঠকের সমাপনী অধিবেশনে দেন। এফওআরআইএফ হলো ফ্রান্সে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে রাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নয়নের একটি সরকারি উদ্যোগ।

রেতাইয়ো বলেন, ‘রাষ্ট্র ও মুসলিম ধর্মীয় প্রতিনিধিদের মধ্যে সংলাপ পারস্পরিক আস্থা ও দায়িত্ববোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত।’ এ সময় তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, মুসলিমরা তাদের ধর্মকে চরমপন্থী ও বিকৃত মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত করতে চায় না এবং তারা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।

সরকারের এই স্বীকৃতির ফলে ইমামদের কাজকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে আনা হবে। এখন থেকে ফ্রান্সের কর্মসংস্থান সংস্থা ইমামদের জন্য একটি নির্দিষ্ট কর্ম বর্ণনা (জব ডেসক্রিপশন) তৈরি করবে, যেখানে তাদের দায়িত্ব, কাজের পরিধি ও পেশাগত শর্তাবলি স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।

এ ছাড়া, ইমামদের জন্য সরকার নির্ধারিত কর্মসংস্থান চুক্তি থাকবে, যা তাদের কাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং একটি সংগঠিত কাঠামোর মধ্যে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেবে।

রেতাইয়ো তাঁর ভাষণে ফ্রান্সে ইসলামবিদ্বেষ সম্পর্কিত পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, ২০২৩ সালে ফ্রান্সে ১৭৩টি মুসলিমবিরোধী হামলার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ, অনেক ভুক্তভোগী হয়তো এ ধরনের ঘটনার অভিযোগ জানাতে চান না বা জানাতে ভয় পান।

এ সমস্যা সমাধানে ফরাসি সরকার একটি নতুন অনলাইন অভিযোগ প্ল্যাটফর্ম চালু করবে, যেখানে ইসলামবিদ্বেষী হামলা বা বৈষম্যের শিকার ব্যক্তিরা সহজেই অভিযোগ জানাতে পারবেন।

ফরাসি সরকার হাসপাতাল ও সামরিক বাহিনীতে কাজ করা মুসলিম ধর্মযাজকদের (চ্যাপলিন) আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে মুসলিম চ্যাপলিনরা এখন থেকে ফরাসি জনসেবা (পাবলিক সার্ভিস) খাতের সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন। এর ফলে হাসপাতাল ও সামরিক বাহিনীতে মুসলিমদের ধর্মীয় আচার ও চর্চার জন্য আরও সুসংগঠিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

ফ্রান্সে ধর্মনিরপেক্ষতা একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি, যা রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা রাখার কথা বলে। তবে এই নতুন পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের কাজকে স্বীকৃতি দিচ্ছে এবং একটি কাঠামোগত পদ্ধতির মধ্যে আনছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই স্বীকৃতি মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং ইসলামবিদ্বেষ রোধেও সহায়ক হবে। তবে কিছু মহল থেকে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাও হতে পারে। কারণ, ফ্রান্সে ধর্মীয় বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলছে।

এই সিদ্ধান্ত ফ্রান্সের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি, যা ইমামদের পেশাগত স্বীকৃতি, কর্মসংস্থান সুবিধা এবং ইসলামবিদ্বেষ মোকাবিলায় সরকারের দায়বদ্ধতা বাড়ানোর প্রতিফলন ঘটায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *