এক ক্রীড়া সাংবাদিকের স্ত্রী ও সন্তান আত্মহত্যা করেছে। প্রশ্ন উঠছে বিস্তর। সেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। অন্যদিকে সুন্দরবনে দেখা গেছে বাঘের মুণ্ডু আর মানুষের দেহের সংমিশ্রণে জন্ম নেওয়া এক ভয়ংকর প্রাণী। এরও উত্তর মিলছে না। এসব প্রশ্নের উত্তর মিলিয়েছেন সোহানী শিফা ও শানারেই দেবী শানু। এই দুই লেখকের থ্রিলার যথাক্রমে ‘৮৬ জংশন রোড’ এবং ‘বাঘমানুষ’ এসেছে বইমেলায়। কিন্তু সামগ্রিকভাবে থ্রিলার উপন্যাস বা গল্প লেখায় নারীদের অবস্থানটা কেমন? জানিয়েছেন লেখকদ্বয়।লেখা ভালো হলে পাঠক গ্রহণ করবেন
আমার লেখার ক্ষেত্রে কোনো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ কিংবা স্বতঃস্ফূর্ততাকে প্রাধান্য দিই। শব্দ আমার কাছে স্রোতস্বিনী নদীর মতো। আমি অনেকের লেখা পড়ি।
তবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন ভাইয়ের থ্রিলার ভাবনার আড্ডাগুলো থ্রিলার লেখার ক্ষেত্রে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আমি তাঁর লেখার ভক্ত। বিদেশি থ্রিলার গল্প পড়ার সময় প্লট এবং গল্প বলার ধরন খেয়াল করি। থ্রিলার লেখার বিষয়টা অনেক তথ্যনির্ভর কিছু কিছু ক্ষেত্রে। কোনো তথ্য যোগ করলে সেটা সঠিক হওয়া জরুরি। বেশ পড়াশোনা করতে হয় নির্দিষ্ট লেখার বিষয়ের ওপর।
আমার এবারের উপন্যাসটি ভিন্নধর্মী, মিথলজিক্যাল থ্রিলার ‘বাঘমানুষ’। অর্ধেক বাঘ আর অর্ধেক মানুষের মতো দেখতে অদ্ভুত এক প্রাণীর কথা লেখা আছে মণিপুরি মিথলজিতে। সেটা নিয়েই লিখেছি। দুম করেই মানুষ নিখোঁজ হচ্ছে সুন্দরবনের রিসোর্টগুলো থেকে। সেখানে বাঘের মুণ্ডু আর মানুষের দেহের সংমিশ্রণে এক প্রাণী দেখার কথা বলছে কেউ কেউ। এই বাঘমানুষ মিথ নাকি সত্য, তা অনুসন্ধানের চেষ্টা নিয়েই এগিয়েছে গল্প। মণিপুরি মিথলজির প্রাচীন লোকগাথার একটি গল্পের পরাবাস্তবতা ও সুন্দরবনের গহিন অরণ্যের নির্মম বাস্তবতার মিশেলে এই মিথলজিক্যাল থ্রিলার।
লেখক সত্তায় লৈঙ্গিক বিভেদটা আমার পছন্দ নয়। লেখক লেখকই, তিনি নারী কিংবা পুরুষ—যে-ই হোন। তবে দেশে নারী লেখকদের বেশির ভাগকেই যেহেতু সংসারজীবন সামলে লেখালেখি করতে হয়, তাই সময়সাপেক্ষ লেখার ক্ষেত্রে হয়তো কিছুটা পিছিয়ে থাকেন তাঁরা। সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে নারীদের লড়াই যুগ যুগ ধরে, সব ক্ষেত্রে। তবে সৃজনশীল কাজ, নারী বা পুরুষ—যারই হোক না কেন, মূল্যায়ন পাবেই। লেখা ভালো হলে পাঠক গ্রহণ করবেন, এটা আমি বিশ্বাস করি। লেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন বিষয়বস্তু বেছে নিই, যেটা লেখক হিসেবেও আমাকে টানে এবং যেটা লিখলে পাঠককেও নতুন কিছু দেওয়া হয়। তাই এবার মিথলজি নিয়ে লেখা।
শানারেই দেবী শানু, অভিনয়শিল্পী, লেখক সোহানী শিফা
থ্রিলার লেখার শুরুটা আমাদের হয়ে গেছে
এমন কিছু চরিত্র নিয়ে কাজ করার চেষ্টা থাকে, যেগুলোর সঙ্গে মানুষ সহজে পারে নিজেকে কানেক্ট করতে। আনন্দ, বিরহ, রহস্য আর ভৌতিক বিষয়গুলো থাকে আমার লেখায়। দেশীয় থ্রিলার তেমন একটা নেই, সেভাবে পড়াও হয়নি। এর কারণ মনে হয়, আমরা রবীন্দ্রনাথকে অনেক বেশি ফলো করি। তিনি প্রেম, ভালোবাসা নিয়েই বেশি লিখেছেন। তাই লেখালেখি বা সাহিত্যে সেই ছাপটাই বেশি। পাঠক প্রেম-বিরহ এ ধরনের গল্পই বেশি পছন্দ করেন। ঘুরেফিরে তাই সাহিত্যটা ওই কেন্দ্রিকই থেকে গেছে। তবে হ্যাঁ, গতবারের বইমেলা আর এবারের বইমেলা ঘুরে দেখেছি, থ্রিলারের একটা আধিপত্য ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে।
সত্যি বলতে, নারী থ্রিলার লেখক খুবই কম। ২০১১ সালে আমার প্রথম থ্রিলার প্রকাশিত হয়। সেটা লেখা শুরু করেছিলাম ২০০৯ সালে। বইটা চললেও তেমন সাড়া ফেলেনি। সেটি ছিল সাইবার ক্রাইমভিত্তিক। মানুষের হাতে হাতে তখন স্মার্ট ফোন ছিল না। সম্ভবত সে কারণে মানুষ বইটা নিয়ে খুব একটা আকর্ষণ অনুভব করেনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে থ্রিলারের চাহিদা বেড়েছে। মানুষ এখন থ্রিলার পছন্দ করছে। আশা করছি, থ্রিলারের ক্ষেত্রে নারী লেখকদের আগ্রহ বাড়বে। গতবার পাঠকের সাড়া পাওয়ায় আমার আগ্রহ বেড়েছে লেখার প্রতি। পাঠকেরা এবারে
স্টলে এসেছেন, আমার সঙ্গে কথা বলেছেন, বই নিয়েছেন—এগুলো একজন লেখককে আরও বেশি দায়বদ্ধ করে তোলে।
নারীদের সাহিত্যের জায়গাটা এমন হয়ে গেছে যে পাঠক ভেবে নেন, শিল্প-সাহিত্যে নারীদের অবদান কবিতা পর্যন্তই।
কিন্তু আমরা যারা থ্রিলার লিখছি, তাদের শুরুটা হয়ে গেছে। এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়লে থ্রিলার লেখার ও পড়ার চর্চা বাড়বে। লিখলে যেমন পাঠক তৈরি হয়, পাঠকের পড়ার কারণেও লেখকের জন্ম হয়। বই মানুষকে বিভিন্ন আবেগের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। বই মানুষকে ভেতর থেকে পরিবর্তন করে দেয়।
সোহানী শিফা, লেখক
অনুলিখন: কাশফিয়া আলম ঝিলিক