ইসরায়েলের ১৫ মাসের নির্বিচার আগ্রাসনের ফলে গাজা আক্ষরিক অর্থেই ধুলো মিশে গেছে। সেই গাজা পুনর্গঠনে আরব বিশ্বের দেশগুলো ২০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল দিতে পারে। মিসরের দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে। তারা জানিয়েছে, মিসরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি সৌদি আরব সফরের যেতে পারেন।
মিসরের দুটি নিরাপত্তা সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ আল-সিসি আগামী বৃহস্পতিবার রিয়াদ সফর করবেন। সেখানে তিনি গাজার জন্য একটি আরব পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন। এই পরিকল্পনার আওতায় অঞ্চলটি পুনর্গঠনের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত সহায়তা আসতে পারে।
আরব রাষ্ট্রগুলো গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছে। এই আলোচনাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের পাল্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ট্রাম্পের প্রস্তাব অনুসারে, গাজাকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে পুনর্গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে এবং এতে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের সম্ভাবনা রয়েছে, যা অঞ্চলটির নেতাদের ক্ষুব্ধ করেছে।
সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার এই আরব পরিকল্পনা রিয়াদে পর্যালোচনা ও আলোচনা করবে। এরপর এই পরিকল্পনা আগামী ৪ মার্চ কায়রোতে নির্ধারিত আরব সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবগত চারটি সূত্র জানিয়েছে।
আগামী শুক্রবার সৌদি আরবে আরব রাষ্ট্রপ্রধানদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। যেখানে জর্ডান, মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এই বৈঠক সৌদি আরবের উদ্যোগে ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিরোধিতায় আরব প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে কিছু সূত্র বলছে, বৈঠকের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ট্রাম্পের ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ তৈরির লক্ষ্যে গাজার ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করে তাদের বেশির ভাগকে জর্ডান ও মিসরে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা আরব রাষ্ট্রগুলোকে হতাশ করেছে। কায়রো ও আম্মান এই পরিকল্পনা তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এটি অঞ্চলটির জন্য মারাত্মক অস্থিতিশীলতার কারণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরব প্রস্তাবটি মূলত মিসরের পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। যেখানে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না এমন একটি জাতীয় ফিলিস্তিনি কমিটি গাজার শাসন পরিচালনা করবে এবং পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে, তবে ফিলিস্তিনিদের বিদেশে বিতাড়িত করা হবে না।
এটি বাস্তবায়নে আরব ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দুটি সূত্র জানিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের গবেষক আব্দুলখালেক আব্দুল্লাহ মন্তব্য করেছেন, ‘ট্রাম্প চুক্তিভিত্তিক ব্যক্তি, তাই ২০ বিলিয়ন ডলার তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হতে পারে। এটি অনেক মার্কিন ও ইসরায়েলি কোম্পানির জন্যও লাভজনক হবে।’
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের মন্ত্রিসভা গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আলোচনাধীন পরিকল্পনার প্রথম পর্যায় বাস্তবায়নে তিন বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার লাগবে। মিসরীয় সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, এই অঞ্চলের আর্থিক অবদানের পরিমাণ নিয়ে আলোচনা এখনো চলছে। পরিকল্পনাটি তিন বছর সময় ধরে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, মার্কিন সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল সোমবার ইসরায়েল সফরকালে তেল আবিবে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার আরব নেতাদের সঙ্গে আলোচনা, বিশেষ করে সম্প্রতি রাজা আবদুল্লাহর সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে আমি নিশ্চিত যে, তাঁরা তাদের ভূমিকা সম্পর্কে বাস্তবধর্মী মূল্যায়ন করেছেন।’
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’র বলেছেন, ইসরায়েল পরিকল্পনাটি পর্যালোচনা করে দেখবে, তবে গাজায় যদি হামাসের কোনো উপস্থিতি থাকে, তবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন এটি শুনব, তখন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তা ঠিক করব।’