ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ের বাসিন্দা মাহমুদ আকরাম। ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ ভাষার জগতে এক বিস্ময়কর প্রতিভা। তিনি ৪০০টি ভাষায় পড়তে, লিখতে এবং কম্পিউটারে টাইপ করতে পারে। এর মধ্যে ৪৬টি ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন। তাঁর এই দক্ষতা ভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও অধ্যবসায়ের ফল।
মাহমুদের ভাষার প্রতি আগ্রহ শুরু হয় শৈশবেই। তাঁর বাবার শিলবি মোঝিপ্রিয়ানও ১৬টি ভাষায় পারদর্শী। কগনিটিভ সাইকোলজিতে পিএইচডিসহ বেশ কয়েকটি ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। শিলবি কর্মসূত্রে ইসরায়েল, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশে ভাষাগত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। তখনই পণ করেছিলেন, সন্তানও যেন একই সমস্যায় না পড়ে। তাই, মাহমুদ যখন মায়ের গর্ভে, তখনই ভাষা নিয়ে আলোচনা করতেন শিলবি দম্পতি। শৈশব থেকে পরিবারে এসব আলোচনাই মাহমুদের ভাষার প্রতি আগ্রহ জাগাতে সহায়তা করে।চার বছর বয়সে মাহমুদ ভাষা শিক্ষার যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে তিনি তামিল ও ইংরেজি বর্ণমালা শিখতে শুরু করেন এবং মাত্র ছয় দিনে ইংরেজি বর্ণমালা আয়ত্ত করেন। তামিলের ২৯৯টি বর্ণ শিখতে তাঁর সময় লেগেছিল মাত্র তিন সপ্তাহ। যেখানে শিশুদের সাধারণত এটি শিখতে মাসের পর মাস সময় লাগে। বাবার সহায়তায় প্রাচীন তামিল লিপি যেমন: ভাট্টেলুত্তু, গ্রন্থা এবং তামিঝি শিখে ফেলেন মাহমুদ। ছয় বছর বয়সে বাবার ভাষাজ্ঞানকে অতিক্রম করে আরও ভাষা শিখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি।ছয় থেকে আট বছর বয়সের মধ্যে মাহমুদ স্বশিক্ষায় ৫০টি ভাষা শিখে ফেলেন। তখন তিনি বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক এবং অনলাইন এনসাইক্লোপিডিয়া ওমনিগ্লটের ওপর নির্ভর করতেন। আট বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ বহুভাষিক টাইপিস্ট হিসেবে প্রথম বিশ্ব রেকর্ড অর্জন করেন, যেখানে তিনি বিভিন্ন ভাষায় টাইপ ও পড়ার দক্ষতা প্রদর্শন করেন।
দশ বছর বয়সে এক ঘণ্টার মধ্যে ২০টি ভাষায় ভারতের জাতীয় সংগীত লিখে দ্বিতীয় বিশ্ব রেকর্ড অর্জন করেন মাহমুদ। বারো বছর বয়সে তিনি ৪০০টি ভাষায় পড়া, লেখা ও টাইপ করার দক্ষতা অর্জন করেন এবং জার্মানিতে ৭০ জন ভাষাবিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তৃতীয় বিশ্ব রেকর্ড অর্জন করেন। সেখানে তিন মিনিটের মধ্যে একটি বাক্য যত বেশি সম্ভব ভাষায় অনুবাদ করতে হয়েছিল। মাহমুদ সর্বাধিক অনুবাদ করে জার্মান ইয়ং ট্যালেন্ট অ্যাওয়ার্ড জয় করেন।
তবে মাহমুদের ভাষার প্রতি গভীর আগ্রহ তাঁর প্রচলিত শিক্ষার পথে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চেন্নাইয়ে পড়াশোনা করেন, কিন্তু ভাষা শিক্ষার জন্য বিশেষায়িত স্কুলের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ভারতে এমন স্কুল না পাওয়ায় তিনি ইসরায়েলের একটি অনলাইন স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন, যেখানে প্রধান বিষয়ের পাশাপাশি হিব্রু, আরবি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষা শিখেন।মাহমুদ তামিল ভাষার প্রাচীন সাহিত্য ও জ্ঞানকে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চান। তাঁর লক্ষ্য তামিল ভাষার সম্পদকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া, যাতে বিশ্ববাসী তামিল সংস্কৃতি ও জ্ঞান সম্পর্কে জানতে পারে। তিনি আকরাম গ্লোবাল ল্যাঙ্গুয়েজ ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান। অনলাইন এবং সশরীরে ভাষা শিক্ষা দেন তিনি।