ট্রাম্প জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ১৬ লাখ ভারতীয়

আন্তর্জাতিক

বাবা–মা অন্য দেশের নাগরিক হলেও, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নিলেই সে দেশের নাগরিকত্ব পাওয়া যায়। মার্কিন সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনীর মাধ্যমে ১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে বহাল এ বিধান। তবে এ বিধান সংশোধন করে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া বন্ধ করবেন—এ কথা বারবার বলেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাঁর এই জোর তৎপরতা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে দেশটিতে বসবাসরত ভারতীয়দের।

মার্কিন সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনী অনুযায়ী, ‘যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী এবং নাগরিকত্বের শর্ত পূরণকারী সব ব্যক্তি দেশটির এবং যে অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেছেন ওই রাজ্যের নাগরিক হবেন।’

ট্রাম্পের কাছে এই আইন ‘হাস্যকর’। প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদেও এই আইনের বিরুদ্ধে বলেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত পরিবর্তন করেননি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের নির্বাচিত হওয়ার পর গত শুক্রবার জানিয়ে দিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি শপথ নিয়েই যেসব নির্বাহী আদেশ দেবেন তার মধ্যে এটিও থাকবে।

২০২২ সালে মার্কিন আদমশুমারি বিশ্লেষণ করে দেশটির অন্যতম জরিপ প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৮ লাখ ভারতীয়–আমেরিকান বসবাস করছেন। এর মধ্যে ৩৪ শতাংশ, অর্থাৎ ১৬ লাখের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রে। ফলে তাঁরা আইনত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। যদি ট্রাম্প এই আইনটি বাতিল করেন, তাহলে এই ১৬ লাখ ভারতীয়–আমেরিকান নাগরিকত্ব হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।

ট্রাম্প গত শুক্রবার এনবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি পরিবারগুলো ভাঙতে চাই না। তাই একমাত্র উপায়, সবাইকে একসঙ্গে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো। অর্থাৎ, আইনি প্রক্রিয়ায় এই ধরনের নাগরিকদেরও পরিবারের সঙ্গে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’

বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে আইনজীবী রাসেল এ. স্টেমেটস বলেন, ট্রাম্প ও তাঁর অনুসারীরা মনে করেন, সব দেশে এমন বিষয় নেই। এই আইনের অপব্যবহার হচ্ছে। মার্কিন নাগরিক হওয়ার কঠোর মানদণ্ড থাকা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা।

একে ‘বার্থ টুরিজম’ বা ‘জন্ম পর্যটন’ হিসেবে অভিহিত করে ট্রাম্প ও এই নীতির বিরোধিতা করে বলেন, অনেকে সন্তানকে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বানাতে এখানে এসে সন্তান জন্ম দেন। পরে তাঁরা নিজ দেশে ফিরে যান।

নাম্বারস ইউএসএর গবেষণা পরিচালক এনরিক রুয়ার্ক বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, ‘শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে একটি শিশু জন্মই নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা হওয়া উচিত নয়।’

তবে কাজটি মোটেও সহজ হবে না। এভাবে জন্মসূত্রে নাগরিকদের বাছাই প্রক্রিয়ায় পড়ে অনেক নাগরিকই হয়রানি শিকার হতে পারেন। আমেরিকান ইমিগ্রেশন কাউন্সিলের ২০১১ সালের একটি নথি অনুযায়ী, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিল করা হলে এটি সবার ওপর প্রভাব ফেলবে। মার্কিন বাবা–মায়েদের জন্য তাঁদের শিশুদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা ক্যাটো ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্স নওরাস্তেহ বলেন, ‘আমি তাঁর (ট্রাম্পের) মন্তব্যগুলোর খুব একটা গুরুত্ব দিই না। তিনি প্রায় এক দশক ধরে এ ধরনের কথা বলছেন। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী মেয়াদে এ বিষয় এগিয়ে নেওয়ার জন্য কিছুই করেননি।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলেই সংবিধান সংশোধন করতে পারেন না। অন্য উপায়ে এই আইনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে গেলে সেটি সংবিধানের ১৪ তম সংশোধনী লঙ্ঘন করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *