সরকারের ৬ চিনিকল চালু হচ্ছে চার বছর পর

জাতীয়

২০২০ সালের ডিসেম্বরে চালু থাকা সরকারি ছয় চিনিকলের উৎপাদন বিনা নোটিশেই স্থগিত করা হয়। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এসব কারখানা আধুনিকায়ন করে আবারও উৎপাদনের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু গত চার বছরেও এসব কারখানা চালু করা হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এসব কারখানা চালু করতে যাচ্ছে। শুধু তাই না, সরকারের বাকি ৯ চিনিকলের উৎপাদন বাড়াতেও নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন উদ্যোগ।

শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিগত সরকারের সময়ে সরকারি ছয় চিনিকলের উৎপাদন স্থগিত করা হয়। চার বছর বন্ধ থাকার পর বর্তমান সরকার আবারও এসব চিনিকল চালু করবে। চালুর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যে চিনিকলগুলো এখনো চালু আছে, কিন্তু কাঁচামালসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন করতে পারছে না, সেসব কারখানার উৎপাদন বাড়াতেও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’ শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারি সব চিনিকল পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে সারা বছর চালু রাখতে চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে চিনির আমদানিনির্ভরতা কমবে।’

তিনি বলেন, ‘চিনিকলে অনেক মানুষ কাজ করেন। এসব কারখানা চালু থাকলে শ্রমিক কর্মচারীরা নিয়মিত বেতনভাতা পাবেন। তাদের পরিবারে সচ্ছলতা আসবে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকারের ছয় চিনি কারখানা বন্ধ থাকায় বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়াতে আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। আমদানি বাড়াতে শুল্কসহ অন্যান্য রাজস্ব ছাড় দিতে হয়। রাজস্ব ছাড় দেওয়ায় সরকার রাজস্ব কম পাচ্ছে। দেশি শিল্প থেকে চিনির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হলে আমদানিতে রাজস্ব ছাড় দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। ফলে সরকারের আয় বাড়বে।’

সাদা ও অপরিশোধিত- দুই ধরনের চিনি আমদানি উৎসাহিত করতে দফায় দফায় শুল্ক কমানো হয়েছে। আর এতে গত এক অর্থবছরে গড়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের (বিএসএফআইসি) অধীনে পরিচালিত কুষ্টিয়া, পাবনা, রংপুর, সেতাবগঞ্জ, পঞ্চগড় এবং শ্যামপুর চিনিকলের উৎপাদন স্থগিত করা হয়। বন্ধের সময় সরকারি ছয় চিনিকলে ২ হাজার ৮৮৪ জন শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন স্থগিত আদেশ দেওয়ার পর শিল্পমন্ত্রণালয়ে নিজস্ব দপ্তরে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে আধুনিকায়ন করে ছয় চিনিকল আবারও চালু করা হবে। বন্ধ কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের চালু চিনিকলে কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়ন হয়নি। অনেকে কাজ না পেয়ে এখনো বেকার হয়ে আছে। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছে।

গত ১৬ নভেম্বর শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান সেতাবগঞ্জ চিনিকল সফরে যান। এর আগে গত চার বছরে এসব কারখানা পরিদর্শনে সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী পর্যায়ের কেউ যাননি। সফরকালে শিল্প উপদেষ্টা সেতাবগঞ্জ চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আখচাষি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান দীপিকা ভদ্র, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা ও দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম।

বৈঠকে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান জানান, সরকার যত দ্রুত সম্ভব ছয় চিনি কলের উৎপাদন পুনরায় শুরুর জন্য উদ্যোগ নিচ্ছে। চালুর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির কাজের অগ্রগতি কতটা হচ্ছে তা নজরদারি করা হচ্ছে।

১৫ নভেম্বর নাটোরে উত্তরবঙ্গ চিনিকলেও যান আদিলুর রহমান খান। এ সময় ওই চিনিকলের বিরাজমান সমস্যা নিয়ে একাধিক বৈঠক করেন। চিনিকলটির ২০২৪-২৫ মৌসুমের আখ মাড়াই কার্যক্রম উদ্বোধন করে শিল্প উপদেষ্টা বলেন, চিনিকলে বিরাজমান সমস্যার সমাধান করা হবে।

২০২০ সালে আখ মাড়াইয়ের কিছু দিন আগেই ছয় চিনিকল বন্ধ করা হয়েছিল। বিনা নোটিশে চিনিকল বন্ধ করায় আখ বিক্রি হয়নি। অনেক চাষি মাঠেই আখ পুড়িয়ে ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

অন্যদিকে চিনি উৎপাদনের কাঁচামাল আখের অভাবে বছরের সাত থেকে আট মাস বন্ধ থাকে সরকারের বাকি ৯ চিনিকল। এসব কারখানা সারা বছর উৎপাদনে রাখতে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও গত ১৫/১৬ বছরেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে চালু সরকারি ৯ চিনিকল থেকে সারা বছর গড়ে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টন চিনি পাওয়া যাচ্ছে। এসব চিনি বাজারজাত করতেও সময়মতো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। বেশির ভাগ গুদামেই ফেলে রাখা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে সারা বছর গড়ে ১৮ লাখ টন চিনির চাহিদা রয়েছে। অন্য মাসের তুলনায় রোজার এক মাসে চিনির চাহিদা দেড় লাখ টন থেকে বেড়ে গড়ে ৩ লাখ টন হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *