সালমা হত্যার বিষয়ে ‘ছেলের ভাষ্যই’ উপস্থাপন করা হয়েছে: র‌্যাব

জাতীয়

বগুড়ায় গৃহবধূ উম্মে সালমা হত্যা মামলা ‘নতুন মোড়’ নেওয়ার পর র‌্যাব বলছে, ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই তাকে মায়ের ‘হত্যাকারী’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

এর পরেও র‌্যাবের তদন্তে নিজেদের কারও ‘গাফিলতি বা তথ্যগত কিংবা প্রক্রিয়াগত ভুল থাকলে’ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থার আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।

ঢাকার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে শনিবার দুপুরে তিনি বলেছেন, “ছেলের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি। তার স্পষ্ট জবানবন্দির ফুটেজসহ আমাদের কাছে আছে। তিনি যখন জবাবন্দি দিচ্ছিলেন আমাদের কাছে, পাশের রুমে তার আত্মীয়স্বজন ছিলেন।

“তাকে যখন আমাদের ক্যম্পে নিয়ে আসা হয়, তখনও তার আত্মীয়স্বজনরা আমাদের সাথে আসেন।”

গত ১০ নভেম্বর দুপুরে দুপচাঁচিয়ার জয়পুরপাড়ায় আজিজুর রহমানের স্ত্রী উম্মে সালমা খাতুনের (৫০) লাশ বাড়ির ডিপফ্রিজে পাওয়া যায়। হত‌্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পরদিন নিহতের ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এরপর ১২ নভেম্বর র‍্যাব-১২ বগুড়ার কোম্পানি কমান্ডার মেজর এহতেশামুল হক খান নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘হাত খরচের টাকা এবং প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে মনোমালিন্যের জেরেই’ মাকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রাখে সাদ বিন আজিজুর রহমান।

উম্মে সালমার ছেলে সাদ বিন আজিজুর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের আসামি হিসেবে রিমান্ডে থাকার মধ্যেই বৃহস্পতিবার রাতে তিন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শুক্রবার বগুড়া জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, “সাদ তার মাকে হত্যা করেছে- এমন কোনো জবানবন্দি দেননি আদালতে। কিছু তথ‌্য প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি।

“প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিছু তথ‌্য আমাদেরকে দিয়েছে সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি।”

পুলিশের ভাষ্য, হত্যাকাণ্ডের সময় ওই বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ওয়াইফাই রাউটার ও মোবাইলের সূত্র ধরে তারা প্রথমে একজনকে আটক করেন। পরে আরও দুজনকে আটক করা হয়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে র‌্যাব কর্মকর্তা মুনীম ফেরদৌস বলেন, “তদন্তের স্বার্থে তদন্তে ভিন্নতা থাকতে পারে।

“তদন্তে বিভিন্ন মোড় হয়, তদন্তকালীন সময়ে আমাদের যদি কোনও সহায়তার প্রয়োজন হয়- আমরা করব।”

তিনি বলেন, “র‌্যাবের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যদি কোনো ধরনের অভিযোগ বা কোনো গাফিলতি পাওয়া যায়, আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব- তদন্ত সাপেক্ষে। আমাদের কাছে যদি অভিযোগ আসে, আমরা অবশ্যই এটা খতিয়ে দেখব।”

নিহত গৃহবধূর সন্তান ‘র‌্যাবের কাছে মাকে হত্যার কথা বললেও’ আদালতে কেন স্বীকারোক্তি দেননি- এমন প্রশ্নের উত্তরে র‌্যাবের মুখপাত্র বলেন, “স্বীকারোক্তি অনেক ধরনের হতে পারে। নিজে দিতে পারে, ম্যজিস্ট্রেটের সামনেও দিতে পারে। স্বীকারোক্তি দিলেন মানেই ঘটনা প্রমাণ হয়ে গেল বিষয়টা কিন্তু এমন না।

“তিনি যেখানেই স্বীকারোক্তি দেন না কেন, তিনি কিন্তু পরবর্তীতে যেকোনো সময় পরিবর্তন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন করতে পারেন, এটা তার আইনগত অধিকার।”

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক ফেরদৌস বলেন, “তিনি (গ্রেপ্তার ছেলে) আমাদেরকে যে তথ্য দিয়েছেন, তাকে নিয়ে যে ধরনের আলামত উদ্ধার করেছিলাম, তার ভিত্তিতেই আমরা এটা জানিয়েছিলাম।

“এরপরেও আমাদের যদি কোন গাফিলতি থাকে, এটা তদন্তাধীন বিষয়। উভয় সংস্থাই তদন্ত করছে। আমরা পুলিশের তদন্তে সহায়তা করব, তাদের দরকার হলে যোগাযোগ করতে পারে। তদন্তে যদি আমাদের কোনো গাফিলতি হয়, গাফিলতিতে যার দায় থাকবে- তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।”

র‌্যাবের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গৃহবধূ সালমা হত্যার ঘটনায় ছেলেকে খুনি হিসেবে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আলোড়ন তৈরি হয়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে র‌্যাব কর্মকর্তা মুনীম ফেরদৌস বলেন বলেন, “তার (ছেড়ে) দেওয়া তথ্য মতে- সেটার ভিত্তিতে জানিয়েছি। মিডিয়া ব্রিফিংটা একটা সামাজিক সচেতনামূলক কাজ, অপরাধ নিবারণমূলক যে কাজ, মানুষ যাতে এটা থেকে শিক্ষা নেয়। মানুষকে সচেতন করা, নিবারণমূল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ব্রিফিং করা হয়।”

নিহতের ছেলের ভাষ্যেই উপস্থাপন করা হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “এখন যেটা তথ্য বেরিয়েছে, পূর্ণাঙ্গ তদন্তে অন্যকিছুও বের হতে পারে।

“আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, তদন্তে র‌্যাবের যদি কোনো গাফিলতি থাকে, তথ্যগত বা প্রক্রিয়াগত কোনো ভুল থাকে এবং এ প্রক্রিয়ার সাথে যদি কেউ দায়ী হয়, তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *