গাজীপুরের ‘টিএনজেড অ্যাপারেলস’ গ্রুপের পাঁচটি কারখানার তিন হাজারের বেশি শ্রমিক ও কর্মীরা বেতন পেয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়। শনিবার থেকে কারখানা চালু হবে বলে নোটিস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে বেতন পেয়ে শ্রমিকেরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারখানার শ্রমিক শরীফা বেগম বলেন, “রোববারের মধ্যে বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমরা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ই বিকাশ অ্যাকাউন্টে বেতন পেয়ে গেছি। মালিকপক্ষ কথা দিয়ে কথা রেখেছেন; আমরা সবাই খুশি।”
টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের চেয়ারম্যান হেদায়তুল হক বলেন, “আমরা সরকারের সহায়তায় প্রথম দফায় নির্ধারিত সময়ের আগেই বৃহস্পতিবার ৮ কোটি টাকা পরিশোধ করেছি। সেপ্টেম্বরে বেতন দিতে পারি নাই বলে শ্রমিকরা কোনো কাজই করেন নাই। ফলে এ টাকা তারা কোনো কাজ না করেই পেয়েছেন।
“শ্রমিকেরা তাদের দাবিকৃত টাকা পেয়েছেন। পরের টাকাও তারা সময় মতো পাবেন। শনিবার থেকে কারখানাগুলো আবার চালু হবে। আশা করছি, এদিন শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেবেন এবং কারখানার উৎপাদনে অংশ নিয়ে মালিকপক্ষের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহযোগিতা করবেন।”
গাজীপুর নগরীর মোগরখাল এলাকার টিএনজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের পাঁচটি কারখানায় কারখানায় স্টাফসহ সাড়ে ছয় হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এসব সব কারখানার মধ্যে টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস লিমিটেডে ২ হাজার ৮০০ জন, বেসিক ক্লথিং লিমিটেডে ৪২০ জন ও অ্যাপারেল আর্ট লিমিটেডে ৪০০ জন শ্রমিক রয়েছেন। এ ছাড়া এক্সপো কার্টুনে ৪০ জন এবং এমএনএস ইয়ার্ন ডায়িংয়ে ৮০ জন স্টাফ রয়েছেন। এসবের মধ্যে প্রথম তিনটিতে শ্রমিকদের অক্টোবর ও সেপ্টেম্বর মাসের বেতন এবং বাকিগুলোতে স্টাফদের বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট বকেয়া ছিল।
শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ফলে এ দুটি মহাসড়ক দিয়ে চলাচলকারী লোকজনকে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। টানা তিন দিনের আন্দোলনে ব্যাহত হয় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা; ক্ষতিগ্রস্ত হয় পণ্য পরিবহন।
পরে সোমবার রাতে ঢাকায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। রাতেই অবরোধ প্রত্যাহার করেন শ্রমিকেরা। ওই বৈঠকে রোববার পর্যন্ত সময় নেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কারখানার শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। পাশাপাশি কারখানা কর্তৃপক্ষ কাল থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং নোটিসের মাধ্যমে সেটি জানিয়েও দেওয়া হয়।
সোমবার রাতে শ্রম ভবনে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে টিএনজেড গ্রুপের ৩১ জন শ্রমিক প্রতিনিধি, বিজিএমইএর নেতারা এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সর্বসম্মতিক্রমে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এতে বলা হয়, ১৭ নভেম্বরের মধ্যে শ্রমিকদের সেপ্টেম্বর মাসের এবং ৩০ নভেম্বর অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। গ্রুপের কারখানাগুলো কর্তৃপক্ষ দ্রুত খুলে দেবে। এ ছাড়া ৩০ নভেম্বরের আগে কেউ যদি আবার সড়ক অবরোধ করেন, তাহলে টাকা পরিশোধ করা হবে না বলেও জানানো হয় বৈঠক থেকে।
পরে শ্রমিকেরা অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলে সোমবার রাত ১০টার পর থেকে ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
টিঅ্যান্ডজেড অ্যাপারেলস গ্রুপের চেয়ারম্যান হেদায়তুল আক্ষেপ করে বলেন, “আমরা সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করেছি। ব্যাংকে সুদ বাবদ সোয়াশ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছি। আমরা কোনো খেলাপি প্রতিষ্ঠান নই। রপ্তানির টাকা সমন্বয় হতে দেরি হওয়ায় আমাদের ওভারডিউ হয়েছে।
“এ কারণে ব্যাংক থেকে ৮ কোটি টাকার একটি লোন অনুমোদন করানো হয়, যাতে শ্রমিকদের বেতন দেওয়া যায়। কিন্তু ব্যাংক আমাদের সে টাকাটা দেয়নি। এ কারণে আমরা ঝামেলায় পড়ে গেছিলাম।”
তিনি বলেন, “আমাদের ‘এক্সপোর্ট বিল আপ ফান্ড’ আছে। সেখান থেকে ১১-১২ কোটি টাকা তুলে শ্রমিকদের বেতন দিতে চেয়েছিলাম। সে টাকাও আমরা পাইনি। তাছাড়া আমাদের আরও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা দায়িত্ব নিয়ে সহযোগিতা করলে এ পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। এসব কারণে আমরা কয়েকবার তারিখ দিয়েও তা রক্ষা করতে পারিনি।
“পরবর্তীতে শ্রম সচিব বিদেশ থেকে দেশে ফিরেই তাৎক্ষণিকভাবে সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন। শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে সহযোগিতা করায় উপদেষ্টাসহ শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিকুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব সবুর হোসেন, বিজিএমইএর অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলা ও গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফীনের কাছ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
টিএনজেড অ্যাপারেলসের শ্রমিক আসাদুল ইসলাম বলেন, “আমরা টেহার লাইগা কাম করি। মাস শেষে টেহা পাইলে আর কোনো কথা নাই। টেহা পাওয়ার পর ওঠাইয়া বাড়ির ভাড়া ও দোকানের বাকিও পরিশোধ কইরা দিছি।”