ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে এই হামলা শুরু হয়। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা ইরানের ‘সুনির্দিষ্ট সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে’ হামলা চালিয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৪০টি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ইরানের ২০ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
ইসরায়েলি হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীও। তারা জানিয়েছে, রাজধানী তেহরানসহ খুজেস্তান এবং ইলাম প্রদেশের বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল বাহিনী।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ইরানের বিমান প্রতিরক্ষাসহ ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলোতে আঘাত করেছে। হামলা শেষে ইসরায়েল জানিয়েছে, ‘প্রতিশোধমূলক হামলা এবং মিশনটি সম্পন্ন হয়েছে।’
দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, রাতে প্রায় ২০টি স্থানে আঘাত করার পর ইসরায়েলের সময় ভোর ৫টা নাগাদ ইরানে ইসরায়েলের হামলা শেষ হয়। সিএনএন বলছে, তেহরানে স্থানীয় সময় রাত ২টার পর প্রথম বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তিন ঘণ্টা পর বিস্ফোরণের দ্বিতীয় তরঙ্গের খবর পাওয়া যায়।
ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১৪০টি যুদ্ধবিমান অংশ নেয় বলে ইরান ইন্টারন্যাশনালের খবরে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আই২৪ নিউজ জানায়-ইরানের বিভিন্ন সাইট লক্ষ্য করে ১৪০টি ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান হামলা চালায়।
ইরানের আইআরজিসি-এর সঙ্গে সম্পর্কিত ফারস নিউজ জানায়, তেহরানের পশ্চিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। এদিকে ইসরায়েলি সরকারের প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানের বিরুদ্ধে বিমান হামলার তদারকি করছেন।
শনিবার ইরানে সপ্তাহের প্রথম দিন। ইরানিরা তাদের সপ্তাহ শুরু করল দুই দফা ইসরায়েলি বিমান হামলা দেখার মধ্য দিয়ে। এদিকে, ইসরায়েলি এই হামলা ব্যর্থ করে দেওয়ার দাবি করেছে ইরান। তারপরও এতে সীমিত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী।
শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী জানিয়েছে, “হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও অবৈধ ইহুদিবাদী ভূখণ্ড থেকে তেহরান, খুজেস্তান এবং ইলাম প্রদেশের বিভিন্ন সামরিক কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালিয়েছে। তবে আমাদের সমন্বিত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ইসরায়েলি হামলাকে প্রতিহত করেছে। তবে তারপরও সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”
গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে যে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল তেহরান। ইসরায়েল পাল্টা হামলা করবে, এমন আশঙ্কা গত ১ অক্টোবরের হামলার পর থেকেই ঘুরপাক খাচ্ছিল আন্তর্জাতিক ও মধ্যপ্রাচ্যের আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে। অবশেষে সেই আশঙ্কা সত্য হলো।
হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়া, হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ এবং ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের অপারেশন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্বাস নিলফোরুশান নিহত হওয়ার পর ইরান ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল।
চলতি মাসের শুরুর দিকে ইরান থেকে প্রায় ২০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। সেই ঘটনারই জবাব দিল ইসরায়েল। সূত্র: জেরুজালেম পোস্ট, ফক্সনিউজ, ইরান ইন্টারন্যাশনাল, বিবিসি, অ্যাক্সিওস, নিউ ইয়র্ক টাইমস