বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ভোর থেকে খুলনা ও উপকূলীয় এলাকাসহ খুলনা জেলার সর্বত্র হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির সঙ্গে মাঝে মাঝে বইছে দমকা হাওয়া।
উপকূলের নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে উপকূলীয় উপজেলা কয়রার বিভিন্ন নদ-নদীর বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
এদিকে বৃষ্টির কারণে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আজ দুপুরের পর থেকে ঘূর্ণিঝড় দানা ভারতের উড়িষা উপকূল অতিক্রম করবে। এ সময় খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তর আরও জানিয়েছে, রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা নিম্নচাপ। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’। এরইমধ্যে দানার প্রভাবে মেঘাচ্ছন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের আকাশ। গুমোট আবহাওয়ায় পড়ছে ভ্যাপসা গরম।
খুলনার উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা উপজেলায় লঘুচাপের প্রভাবে গত বুধবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হলেও আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ভারি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় এ অঞ্চলের নদী নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়েও নদীর পানি একটু বৃদ্ধি পেয়েছে। টেকসই ও মজবুত বেড়িবাঁধ না থাকায় উপকূলীয় অঞ্চল কয়রার মানুষের ভেতর এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে নতুন করে বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে, কয়রা উপজেলার দশহালীয়া এলাকার পুরনো মসজিদ সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধের কিছু অংশ নদের গর্ভে বীলিন হয়ে যায়। এলাকার বেড়িবাঁধের এ অবস্থায় স্থানীয়রা ভাঙনের আতঙ্কে সময় পার করছেন।
কয়রা উপজেলার জনপ্রতিনিধি ও পাউবোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনটি নদ-নদীবেষ্টিত কয়রা উপজেলায় পাউবোর বেড়িবাঁধ আছে ১৫৫ কিলোমিটার। এরমধ্যে কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা-ঘাটাখালী এলাকায় ১ কিলোমিটার, ৬ নম্বর কয়রা এলাকায় ৬০০ মিটার, ২ নম্বর কয়রা এলাকায় ৫০০ মিটার, মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি-দশহালিয়া এলাকায় ১ কিলোমিটার, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কাটকাটা থেকে শাকবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, কাশিরহাটখোলা থেকে কাটমারচর পর্যন্ত ৭০০ মিটার, মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের শেখেরকোনা, শিকারিবাড়ি, তেঁতুলতলার চর ও চৌকুনি এলাকায় ২ কিলোমিটারের মতো বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
উপকূলীয় কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস বলেন, কয়রা উপজেলা এলাকাটি একটি প্রাকৃতিক দূর্যোগ কবলিত এলাকা। এখানকার মানুষ শতকষ্টে প্রাকৃতিক দূর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে বসবাস করে আসছে। ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চল কয়রা উপজেলার জনসাধারণের জানমাল রক্ষার জন্য উপজেলার ১১৭টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবীদ মো. আমিরুল আজাদ জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের উড়িষা উপকূল অতিক্রম করা শুরু করবে। যা শুক্রবার ভোর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এর প্রভাবে খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া বাতাসের গতিবেগ থাকবে ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার। এ সময় ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
খুলনার জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, দানার আঘাতে যেন কোনো মানুষের প্রাণহানী না ঘটে সেজন্য খুলনার ৬০৪ সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে পর্যাপ্ত শুকনা খাবারও মজুত রয়েছে। উপকূল এলাকায় ৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন মানুষকে সহায়তা করার জন্য।