প্রচারণার অভাবে সবজি জোটেনি স্পেশাল ট্রেনে

জাতীয়

প্রচার-প্রচারণা ছাড়া চালু হওয়ায় যশোর থেকে সবজি ছাড়াই ছেড়ে গেলো কৃষিপণ্য পরিবহনের স্পেশাল ট্রেন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে যশোর স্টেশন থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে ট্রেনটি।

কৃষক এবং সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রচার প্রচারণা না থাকায় এই ট্রেনের কথা তারা জানতে পারেননি। তবে রেলওয়ের দাবি, প্রচার প্রচারণা চালালেও প্রথম দিনে তেমন সাড়া মেলেনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সবজির চাহিদার বড় অংশ পূরণ হয় যশোর অঞ্চল থেকে। এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় পাইকারি হাট সাতমাইল বারোবাজার। এখানকার সবজি চাষি ও পাইকারদের অভিযোগ, সড়ক পথে সবজি পরিবহনে অতিরিক্ত খরচসহ পথে পথে চাঁদা দিতে হয় তাদের। এতে দামে প্রভাব পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিপণ্য পরিবহনে ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল’ নামে একটি নতুন ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। মঙ্গলবার চালু হওয়া ট্রেনটি খুলনা-যশোর-যশোর ক্যান্টটেনমেন্ট এবং বারোবাজার স্টেশন হয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। তবে প্রথম দিনে সবজি ছাড়াই যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

সূত্র আরও জানায়, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে দেশের ১৫টি উৎপাদক অঞ্চল থেকে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করে দেশব্যাপী সরবরাহ নিশ্চিতের উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে ‘কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন’। বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে যশোর স্টেশনে পৌঁছানোর কথা থাকলেও ৪০ মিনিট বিলম্বে পৌঁছায়। তবে প্রথম দিনেই কৃষিপণ্য বা খাদ্যসামগ্রী বুকিং ছাড়াই যশোর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

সবজি পরিবহনে স্পেশাল ট্রেন সার্ভিস চালুর বিষয়ে কথা হয় যশোর সদরের ছোট হৈবতপুর গ্রামের সবজি চাষি আব্দুল আলিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম ট্রেনের কথা। কবে থেকে চালু হবে বা হয়েছে, জানিনে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ট্রেন মুন্সি মেহেরুল্লাহ স্টেশনে থামলে আমাদের জন্যে ভালো হয়। এখান থেকে ট্রেনে পণ্য পরিবহন করতে পারলে আমাদের সুবিধা।’

জানতে চাইলে যশোর সদরের বারীনগর সাতমাইল হাটের আড়তদার আতিয়ার রহমান বলেন, ‘সবজির জন্য স্পেশাল ট্রেন চালুর বিষয়টি জানি না। অবশ্য আমাদের আড়ত থেকে সবজি পাঠানোর জন্য ট্রাকই ভালো ও সুবিধাজনক। কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য আমাদের আড়তে দিয়ে যান। আর ট্রাক একদম আড়তের সামনে দাঁড়িয়ে লোড দিতে পারে। এতে আমাদের সুবিধা। স্টেশনে যাওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর। যদিও ট্রেনে মাল পাঠাতে পারলে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হবো।’

যশোর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আয়নাল হাসান বলেন, প্রতি সপ্তাহে রোববার ও মঙ্গলবার বিশেষ এই ট্রেন চলাচল করবে। এজন্য ব্যবসায়ী পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। পাশাপাশি কৃষি বিভাগকেও নতুন সার্ভিস সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম দিন হিসেবে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। আগামীতে সাড়া পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী আমরা।

তিনি আরও বলেন, কৃষক বা ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি সবজি বা পণ্য ১ টাকা ৪০ পয়সা ভাড়ায় ঢাকায় নিতে পারবেন। সাশ্রয়ী ভাড়া হিসেবে ট্রেনকে ব্যবহারের জন্য তিনি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।

সবজির বিশেষ ট্রেনের বিষয়ে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, সবজি পরিবহনের জন্য বিশেষ ট্রেনের খবর আমরা জানি। সম্প্রতি যশোর সদরের আব্দুলপুর গ্রামের সবজি চাষিদের নিয়ে একটি ট্রেনিংয়ে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তারা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। যেহেতু ট্রেনে পণ্য পাঠাতে খরচ কম সে কারণে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

এদিকে ট্রেনের পরিচালক জুলহাস উদ্দিন জানান, খুলনা থেকে ৬৪০ কেজি পণ্য নিয়ে তারা ট্রেনটি ছেড়েছেন। যশোরে ১০ মিনিটের যাত্রাবিরতি ছিল। এখানে কোনো পণ্য পাওয়া যায়নি। তবে আগামীতে পণ্য আসবে বলে তিনি আশাবাদী। ৭ বগির স্পেশাল এই ট্রেনটি যশোর ছাড়াও মুন্সী মেহেরুল্লাহ স্টেশন, বারোবাজার, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, সফদারপুর, আনসারবাড়িয়া, উথলি, দর্শনা প্রভৃতি স্টেশনে থামবে। সবজি নিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ট্রেনটি ঢাকার বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও কমলাপুর স্টেশনে থামবে।

এই ট্রেনটি রোববার ও মঙ্গলবার খুলনা, বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় ও শনিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় কৃষিপণ্য নিয়ে যাতায়াত করবে। এই ট্রেনে প্রতি কেজি সবজি ও কৃষিপণ্য বহনে ১ টাকা ০৮ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৪৭ পয়সা খরচ পড়বে। প্রথম দিন খুলনা থেকে ৭টি বগিতে ৬৪০ কেজি পণ্য নিয়ে ছেড়ে গেছে বিশেষ ট্রেন। এই ট্রেনের মাধ্যমে প্রতিদিন ১২০ টন পণ্য আনা নেওয়ার সুবিধা মিলবে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *