‘সুপার শপে মাছ-মাংস কীভাবে নেবো? এগুলো তো আর কাগজের ব্যাগে নেওয়া যায় না। নিরুপায় হয়ে পলিথিনে নিতে হয়। সেটার বিকল্প কী?’সুপার শপের নিয়মিত ক্রেতা জহিরুল হক জাগো নিউজকে বলছিলেন এভাবে।
সুপার শপে প্রায়ই কেনাকাটা করেন রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা সালেহ আহমেদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পলিথিন পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, কিন্তু তার যথাযথ বিকল্প সরকারকে ব্যবস্থা করতে হবে। যেখানে চাল, ডাল, চিনি এরকম প্রতিটি পণ্যের জন্য একটা করে পলিথিন দরকার হয়, সেখানে হঠাৎ করে এতো ব্যাগ থাকবে কি না সেটা একটা বিষয়। ব্যাগের দাম বেশি পড়বে, সেটাও ক্রেতাকে দিতে হবে। আবার ব্যাগ কতদিন টেকসই হবে, এসব বিষয়ও আছে।’
‘সুপার শপে মাছ-মাংস কীভাবে নেবো? এগুলো তো আর কাগজের ব্যাগে নেওয়া যায় না। নিরুপায় হয়ে পলিথিনে নিতে হয়। সেটার বিকল্প কী?’- ক্রেতা জহিরুল হক
এদিকে, বিভিন্ন সুপার থেকে ক্রেতাদের মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠানো হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, ১লা অক্টোবর থেকে কেনাকাটা করতে নিজের পরিবেশবান্ধব ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
সুপার শপ ‘স্বপ্ন’র মালিবাগ আউটলেটের ম্যানেজার হাফিজ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা আমাদের শপের বিভিন্ন জায়গায় এরইমধ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমাদের যে টিস্যু ব্যাগ, জালি ব্যাগ ছিল সেগুলো সরিয়ে নিচ্ছি। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পাটের তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। যার মূল্য ৬ টাকা থেকে ১৭ টাকা পর্যন্ত। ভোক্তাদের সেগুলো কিনে মালামাল নিতে হবে।’
‘পলিথিন ব্যবহার বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। কারণ সতর্ক করা এবং কঠোর হওয়ার সময় পার হয়ে গেছে। তবে শাস্তি দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়। ক্ষতিকর এই ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। তবে ভোক্তা পর্যায়েও সচেতনতা দরকার।’-পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
‘আগোরা’র মগবাজার শাখার অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটলেট ম্যানেজার জাকির হোসেন বলেন, ‘আমরা আগেও কখনো পলিথিনের ব্যবহার করিনি। এতদিন টিস্যু ব্যাগ (নন-ওভেন) ও কাগজের ব্যাগ ছিল, সেগুলোও আজ থেকে বন্ধ। আজ থেকে পাটের ব্যাগের ব্যবস্থা রয়েছে, অন্যথায় কাস্টমাররা নিজ দায়িত্বে ব্যাগ নিয়ে আসবেন।’
বেসরকারি উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থা চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সুপার শপ স্টোরগুলোতে পর্যাপ্ত ব্যাগ আছে কি না এটা পরিবেশ অধিদপ্তরকে তদারকি করতে হবে। ব্যাগের দাম কম নাকি বেশি সেটাও দেখতে হবে। এক্ষেত্রে তরুণদের মনিটরিংয়ে রাখা যায়। ব্যাগ ব্যবহার মানুষের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। যারা বাজারে পাটের ব্যাগ তৈরি করবে, তাদের প্রথম দিকে ট্যাক্সমুক্ত করতে হবে। আবার যারা এখনো পলিথিন ব্যবহার করবে, তাদেরকে পলিউশন ট্যাক্স দেওয়া উচিত। শপগুলোতে পাটের ব্যাগ রাখা বাধ্যতামূলক করতে হবে, তাহলে মানুষও কিনতে বাধ্য হবে।’
অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান ব্যাগের চাহিদা মেটানোর জন্য ব্যাগ তৈরি করবে। হয়তো প্রথম দিকে সংকট দেখা দেবে। কিন্তু ক্রেতারা পাটের ব্যাগ কিনলে সেটা অনেকদিন ব্যবহার করতে পারবেন। ১ থেকে ১০ টাকার ব্যাগ ২/৩ মাস ব্যবহার করা যায়। ফলে মানুষের মাঝে পুনরায় ব্যবহারের প্রবণতা বাড়বে।- এসডোর মহাসচিব ড. শাহরিয়ার হোসেন।
এদিকে আজ ১ অক্টোবর থেকে দেশের সুপার শপগুলোতে নিষিদ্ধ হচ্ছে পলি ব্যাগের ব্যবহার। বিকল্প হিসেবে সব সুপারশপে ক্রেতাদের জন্য পাট ও কাপড়ের ব্যাগ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।