বলিভিয়ার সরকারি ভবনগুলোতে সৈন্য ও ট্যাংক পাঠানোর পর দেশটির সেনাপ্রধানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে সেনাপ্রধানের এই তৎপরতাকে ‘অভ্যুত্থানের চেষ্টা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। খবর এএফপির।
বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ও কংগ্রেস ভবন ঐতিহাসিক ‘প্লাজা মুরিলো’ চত্বরে অবস্থিত। গতকাল বুধবার (২৬ জুন) বিকেলে এ চত্বরে ট্যাংক নিয়ে প্রবেশ করে সৈন্যরা। আর এর পরপরই দেশটির গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণের অভিযোগে বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। এ সময় একটি ট্যাংক বলিভিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের লোহার দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে।
এ সময় আটটি ট্যাংক ও সেনা সদস্যদের পাহারায় সেনাপ্রধান জেনারেল জুয়ান জোসে জুনিগা বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী গণতন্ত্রকে নতুন করে সাজাতে চায়। এটিকে সত্যিকার গণতন্ত্রে রূপ দিতে চায়। গত ৩০ থেকে ৪০ বছর ধরে একই ধরনের কিছু লোকের শাসন আর চলবে না।’
এর কিছু সময় পরই সৈন্য ও ট্যাংক বহরকে প্লাজা মুরিলো এলাকা থেকে পিছিয়ে আসতে দেখা যায়। সৈন্যরা সেখানে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান নিয়েছিল। পরে একটি সামরিক চৌকির বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় সেনাপ্রধান জুনিগাকে আটক করা হয় এবং পুলিশের একটি গাড়িতে জোর করে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ সময় জুনিগাকে দেশটির স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী বলেন, ‘জেনারেল আপনাকে গ্রেপ্তার করা হলো।’
এদিকে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে কয়েকশ সমর্থকদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে বলেন, ‘যে গণতন্ত্রকে আমরা অর্জন করেছি, তা কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না।’ এর আগে প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস থেকে মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে এক টেলিভিশন বার্তায় তিনি বলিভিয়ার জনগণকে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি গণতন্ত্রের পক্ষে জনগণকে সক্রিয় হওয়ার জন্যও আবেদন জানান। জুনিগাকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সে নতুন সামরিক কর্মকর্তাদেরও শপথ করান।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ক্ষমতাসীন দল মুভমেন্ট টুয়ার্ডস সোশ্যালিজমের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে বলিভিয়ার রাজনীতি বেশ কয়েক বছর থেকেই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। ক্ষমতাসীন দল দুটি বলয়ে বিভক্ত, একটি প্রেসিডেন্ট লুইস আর্সের অনুসারী এবং আরেকটি সাবেক প্রেসিডেন্ট মোরালেসের অনুসারী। ২০১৯ সালে সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার অভিযোগে পদচ্যুত হওয়ার আগে মোরালেস ব্যাপক জনপ্রিয় নেতা হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। গণবিক্ষোভে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হন।
এরপর ২০২০ সালে লুইস আর্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন। আর এরপর থেকেই দুই নেতার সম্পর্কে তৈরি হয় টানাপোড়েন। দুর্নীতি ও মাদক পাচারকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আর্সে সরকারের কঠোর সমালোচনা শুরু করেন মোরালেস। তবে ছয় মাস আগে সাংবিধানিক আদালতের মাধ্যমে মোরালেসকে ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। লুইস আর্সেও অবশ্য ফের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেননি।
গত সোমবার জেনারেল জুনিগা টেলিভিশনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, মোরালেস যদি আবারও প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবির্ভূত হতে চান, তবে তিনি তাকে গ্রেপ্তার করবেন। আর এরপর থেকেই দেশজুড়ে গুজব ছড়ায়, পদচ্যুত হতে যাচ্ছেন জুনিগা।
এদিকে বলিভিয়ায় রাজনৈতিক অচলাবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তার দেশ বলিভিয়ার পরিস্থিতির ওপর গভীর নজর রাখছে। এ ছাড়া লাতিন আমেরিকার দেশ চিলি, ইকুয়েডর, পেরু, মেক্সিকো, কলম্বিয়া ও ভেনেজুয়েলা এই সামরিক তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে।