লেবানন কি আরেকটি গাজা হতে চলেছে?

আন্তর্জাতিক

লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধা ও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মধ্যে সম্প্রতি চলতে থাকা বাকযুদ্ধ এবং প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস।

গতকাল শুক্রবার (২১ জুন) জাতিসংঘের মহাসচিব বলেছেন, দুপক্ষের বিবাদমান কথার লড়াইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাত্মক যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা পরিস্থিতি শান্ত করতে এবং হিসাবের গরমিল এড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। খবর আলজাজিরার।

অ্যান্টোনিও গুতেরেস সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘একটি হঠকারী পদক্ষেপ, একটি ভুল হিসাব ওই দুই দেশের সীমান্ত ছাড়িয়ে আমাদের মহাদুর্যোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। সত্যি কথা বলতে পরিস্থিতি আমাদের চিন্তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।’

‘লেবানন আরেকটি গাজায় রূপান্তরিত হলে এই এলাকা এবং এই বিশ্বের মানুষ তার ধকল সইতে পারবে না’, উল্লেখ করেন জাতিসংঘের মহাসচিব।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী ইউনিফিল ও ইউএনটিএসও নামে পরিচিত নিরস্ত্র কারিগরি পর্যবেক্ষকরা অনেক দিন থেকেই দক্ষিণ লেবাননে অবস্থান করছে। এই দলগুলো ‘ব্লু লাইন’ হিসেবে পরিচিত লেবানন ও ইসরায়েলে মধ্যে সীমান্ত বিভেদকারী এলাকা পর্যবেক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে।

অ্যান্টোনিও গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা উত্তেজনা প্রশমন এবং দুপক্ষের মধ্যে হিসাবের কোনো গরমিল যাতে না হয়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বকে জোরেসোরে ও পরিষ্কার করে বলতে হবে, অতিদ্রুত উত্তেজনা নিরসন করা অপরিহার্য এবং এর কোনো সামরিক সমাধান নেই।

গত বছরের অক্টোবরের পর থেকে হিজবুল্লাহ রকেট ও ড্রোনের মাধ্যমে ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে এবং ইসরায়েল এর জবাব দিচ্ছে প্রাণঘাতী বিমান হামলা ও ব্যাপক গোলাবর্ষণের মাধ্যমে। এসব হামলায় কয়েকশ মানুষ নিহত এবং ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

বেশকিছু দিন আগে থেকেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট লেবাননের রাজধানী বৈরুতকে আরেকটি গাজায় রূপান্তরের প্রত্যয়ের প্রকাশ করে আসছেন। আর এই সপ্তাহে হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যদি ইসরায়েল লেবাননে বড় ধরনের হামলা চালায় সেক্ষেত্রে কোনো সংযম দেখানো হবে না এবং কোনো আইন মানা হবে না।

গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখে বিশ্লেষকরা বলছেন, ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসকে হিজবুল্লার সঙ্গে তুলনা করা ঠিক হবে না।

এ বিষয়ে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হাসান বারারি বলেন, ‘হামাসের সশস্ত্র উইং কাশেম ব্রিগেডের তুলনায় হিজবুল্লাহ অনেক বেশি প্রশিক্ষিত, গোছানো ও মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত। আর এ কারণে আমি মনে করি, যুদ্ধে জড়ালে ইসরায়েলকে অনেক মূল্য দিতে হবে।’

মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনী ইসরায়েলের আর হিজবুল্লাহর রয়েছে কয়েক হাজার যোদ্ধা। এসব যোদ্ধাদের সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাদের রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভার, যা দিয়ে ইসরায়েলের সব শহরে হামলা চালানো সম্ভব। এ ছাড়া তাদের আছে ড্রোনের বহর যার মাধ্যমে ইসরায়েলের অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ও বন্দরগুলোতে হামলা চালানো সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রধান প্রতিবন্ধক হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *