নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে এবার চিন্তার ভাঁজ বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই মাঠেই আজ রাত সাড়ে ৮টায় মুখোমুখি হবেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। যেখানে প্রতিপক্ষের থেকে বেশি চিন্তা হচ্ছে নতুন এই স্টেডিয়ামের উইকেট নিয়ে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে ভারতের বিপক্ষে এই মাঠে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ মাত্র ১২২ রান তুললেও রোহিত শর্মারা তুলেছিলেন ১৮২ রান। কিন্তু বিশ্বকাপের মূল লড়াই শুরু হলে মাঠের চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়। ইতিমধ্যে এই মাঠে ৫টি ম্যাচ গড়িয়েছে। যেখানে অধিকাংশ সময়ে ব্যাটিং ধস দেখা গেছে। তাতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে নামার আগে শান্তদেরও দুশ্চিন্তা ভর করেছে নিউ ইয়র্কের ড্রপ ইন উইকেট নিয়ে।
বাংলাদেশ বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করেছে জয় দিয়ে। আজকের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকাও জয়ের ধারা ধরে রেখেছে। দুটি দলই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে এবারের আসর শুরু করেছে। নিউ ইয়র্কের এই মাঠে লঙ্কানদের কুপোকাত করে প্রোটিয়ারা জয় তুলে নিয়েছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও। ডাচদের ম্যাচটিও নাসাউ কাউন্টিতে গড়িয়েছিল। তাতে তৃতীয় বারের মাঠটিতে নামবেন এইডেন মার্করামরা। তাদের কাছে মাঠটির অদ্ভুত আচরণ বেশ পরিচিত হয়েই উঠেছে। টাইগার বাহিনী প্রস্তুতি ম্যাচে মাঠের যে আচরণ দেখেছিলেন তার সঙ্গে অনেকটাই অমিল দেখা গেছে বর্তমান অবস্থা। এই মাঠ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে চতুর্দিকে। আইসিসির পক্ষ থেকেও সে বিষয়ে কথা বলতে হয়েছে।
লঙ্কানদের মাত্র ৭৭ রানে গুটিয়ে দ. আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নেমেও ভুগেছে। এই রান তুলতে তাদের হারাতে হয়েছে ৪ উইকেট। ডাচরাও ১০৩ রানের বেশি তুলতে পারেনি এই মাঠে। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়াদের হারাতে হয়েছে ৬টি উইকেট। গতকাল হয়ে যাওয়া ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে উইকেট নিয়ে অনেক কাজ করা হয়েছে। তাতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও বাকি ম্যাচের ভরাডুবি বাংলাদেশকেও শঙ্কার বাতাস দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয় পেলেও বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছিল। সেখানেও ব্যর্থ হয়েছে টাইগারদের টপ অর্ডার। এরপরে উইকেটের নাজুক অবস্থা থাকলেও ‘শাঁখের করাত’ এর দশা না হয়! কানাডা-আয়ারল্যান্ড ম্যাচে কিছু রান দেখা গেলেও উইকেটের বিরূপ আচরণ সেখানেও স্পষ্ট ছিল। তাতে শঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেলে সেরা আটের লড়াইয়ে এক পা দিয়ে রাখবে দলটি। আবার হেরে গেলেও চিন্তার তেমন কিছুই নেই। নেদারল্যান্ডস ও নেপালের বিপক্ষে জিততে পারলে পরের পর্বে যাওয়া কেউ আটকাতে পারবে না। তাতে আজকের ম্যাচে ভয়-ডরহীন খেলার সুযোগ রয়েছে সাকিব আল হাসান-শান্তদের সামনে। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় তুলে নিলে সেরা আটের দৌড়ে বাধাহীনভাবে এগিয়ে যাবে তারা। এমন সমীকরণে বড় ভূমিকা রাখবে উইকেট। যেখানে টস জয়ী দল বেশ এগিয়ে থাকবে।
এই ম্যাচের আগে গতকাল নিউ ইয়র্কে পা রাখে বাংলাদেশ দল। লঙ্কা বধের পরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন সকলে। জয়টা নির্বিঘ্নে না আসলেও স্বস্তিটা রয়েছে সকলের মধ্যে। মাঠে নামার আগে যেভাবে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছিল তাতে কিছুটা হলেও ছেদ রেখা টেনেছেন টাইগাররা। আজকের ম্যাচে জয় পেলে অনেক প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে কথা না বলেই। পরিসংখ্যানে পিছিয়ে থাকলেও কৌশল এবং মাঠের সুবিধা আদায় করে নিতে পারলে জয় তুলে নেওয়া অসম্ভব কিছু নয়। দলের সঙ্গে সাকিব-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার রয়েছেন। কোন পরিস্থিতিতে কীভাবে ম্যাচ বের করতে হয় সেটি তাদের জানা আছে। দলনেতা শান্ত হলেও এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের বাস্তব জ্ঞান তাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। তাছাড়া এই উইকেটে কীভাবে খেললে নিজেদের সেরাটা বের করে আনা যাবে, সেটি বিগত ম্যাচগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যাবে।
নিউ ইয়র্কের ড্রপ ইন উইকেটে ব্যাটারদের চেয়ে বোলারদের ভূমিকা বেশি থাকে। তাতে শুরুতে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা ফিল্ডিংয়ের সুযোগ পেলে মূল কাজটা করতে হবে বল হাতে। ব্যাটিংয়ে আগে নামলে কৌশলী হওয়া ছাড়া উপায় নেই। সেক্ষেত্রে টপ অর্ডারের দায়িত্বশীল ক্রিকেট খেলতে হবে। সবই হয়তো দল ভালো করে জানে। তবুও মাঠ যেহেতু নাসাউ কাউন্টি, সেহেতু বাড়তি সতর্কতা ছাড়া উপায় কী! কাগিসো রাবাদা, এনরিক নরকিয়া কিংবা কেশব মহারাজরা সেখানে বড় পরীক্ষা নেবেন বাংলাদেশের, সেটি সহজেই অনুমেয়। তার বিপরীতে বাংলাদেশের চাই ভয়-ডরহীন ক্রিকেট। তাতে হারলেও হয়তো ভক্তরা আফসোস করবেন না। আপাতত সকলেই জয়ের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশ এই ম্যাচ শেষ করে উড়াল দেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের উদ্দেশে। সেখানেই হবে বাকি দুটি ম্যাচ। তার আগে মার্কিন মুলুক থেকে টাইগাররা হাসিমুখ নিয়েই ফিরুক, এমনটাই প্রত্যাশা।