সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ ক্রমেই উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। গভীর নিম্নচাপটি যেকোনো সময় ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে শনিবার রাত থেকেই মহাবিপৎসংকেত দেখানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান।শনিবার (২৫ মে) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন বোর্ডের জরুরি সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখানে বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস, ভারতের আবহাওয়া অফিস, চীনের আবহাওয়া অফিস, জাপানের আবহাওয়া অফিস এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিষ্কার বুঝতে পারছি ঘূর্ণিঝড়টি আসন্ন। আমরা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছি।
মহিববুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত রয়েছে। আগামী ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে সংকেত ৩-এ চলে যাবে। সন্ধ্যা নাগাদ বা রাতে ৪-এর ওপরে এবং রাতের বেলা বিপদের পর্যায়ে চলে যেতে পারে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস পর্যালোচনা করে আমরা ঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাত আটটায় আবার এই মন্ত্রণালয়ে সভা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল ১১টায় আমরা আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডেকেছি। এক কথায় এ ঘূর্ণিঝড় আসন্ন, সেটা মাথায় রেখে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করে আমাদের কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছি।
ঘূর্ণিঝড়ে কয়টি জেলা আক্রান্ত হতে পারে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকাটি ইফেক্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে। এখন ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থান করছে। বিশেষ করে পায়রা ও মোংলা বন্দরের সরাসরি দক্ষিণে।
সিডরের মতো ভয়াবহ রূপ নেবে কি না, জানতে চাইলে দুর্যোগ তিনি বলেন, এটা ডেঞ্জার হতে পারে রাত ১২-১টা নাগাদ। এটা ১০ নম্বর মহাবিপদে চলে যেতে পারে, এ রকম একটা ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কাল রোববার ভোর থেকে এটা প্রাথমিক আঘাত হানতে পারে। আর সন্ধ্যা নাগাদ মূলটা আঘাত হানবে। পূর্বাভাসে আমরা এ রকমই বুঝতে পারছি এবং আজকে রাত ১২টা-১টা থেকেই এটা ডেঞ্জার পয়েন্টে চলে যেতে পারে।
এদিকে ঢাকা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় রেমালে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ঘূর্ণিঝড়টি অতিপ্রবল হয়ে আঘাত হানতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও হতে পারে অতি ভারী বর্ষণ।
ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর বলছে, রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যায় ‘রেমাল’ নাম নিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। ওই সময় ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার।
সকালে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপটি উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে। সকালের তুলনায় প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটার এগিয়ে এসে দুপুরে উপকূল থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্কসংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সাগরের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।