কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ বলেছেন, ‘কৃষি উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে বাংলাদেশ প্রধান খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে পেরেছে। একইসঙ্গে চাল, শাকসবজি, আমসহ অনেক ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কৃষিখাতে বিশাল ভর্তুকি, গবেষণার মাধ্যমে কৃষিতে উদ্ভাবন, আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে এই অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে।’
নেদারল্যান্ডসের ওয়াগেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলাদেশের কৃষির রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ সহযোগিতা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার (৭ মে) কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) গড়ে তোলা এখন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগারের অভাব ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বা ভ্যালু চেইন ব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ায় ফসল তোলার পর অনেক অপচয় হচ্ছে। এতে কৃষকেরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।’
মন্ত্রী বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে কৃষিখাত আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। বাংলাদেশের কৃষিকে রূপান্তরের মাধ্যমে টেকসই ও লাভজনক করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের কিছু যুগান্তকারী প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও গবেষণা বাংলাদেশে প্রবর্তন করা হবে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় এবং নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ দূতাবাস কৃষি উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বৈশ্বিক অংশীজন ও কৃষি ব্যবসায়ীদের নিকট বাংলাদেশের কৃষিখাতের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোগ তুলে ধরতে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করা হয়। ওয়াগেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ফর ফুড সিকিউরিটি এ অনুষ্ঠান আয়োজনে সহযোগিতা করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, কৃষি বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও বেসরকারি খাতের দুইশর বেশি প্রতিনিধি এ আলোচনায় অংশ নেন।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশের কৃষিখাতকে ঝুঁকিমুক্ত, টেকসই, লাভজনক ও প্রান্তিক কৃষক এবং উদ্যোক্তাদের জন্য টেকসই করতে সার্বিক সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধান বৈশ্বিক অংশীদাররা।
নেদারল্যান্ডসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম রিয়াজ হামিদুল্লাহ আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন। এতে বক্তব্য দেন কৃষিসচিব ওয়াহিদা আক্তার, ওয়াগেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য রেন্স বোচওয়াল্ড, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, কানাডার সাস্কাচুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট বালজিত সিং ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ড. মো: মাহমুদুর রহমানসহ আরও অনেকে।
বাংলাদেশের কৃষিতে ফসলের আরও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, টেকসই সরবরাহ ব্যবস্থা (সাপ্লাই চেইন) গড়ে তোলা এবং গবেষণায় দক্ষতার ঘাটতি পূরণ—এই চারটি বিষয়ের ওপর আলোচনা সভায় গুরুত্বারোপ করা হয়। আলোচনা শেষে ওয়াগেনিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার জন্য একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা হয়, যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ে পাইলট ভিত্তিতে কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে।