আড়ালের সেই লুনিন এখন নায়ক

আড়ালের সেই লুনিন এখন নায়ক

খেলাধুলা
মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমিফাইনালেও অসাধারণ খেলে রিয়াল মাদ্রিদের জয়ের নায়ক লুনিন।

ম্যানসিটিকে হারানোর ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় ফেদে ভালভের্দে। দুর্দান্ত খেলেছেন অ্যান্টোনিও রুডিগার। তবে ম্যাচ-সেরার ট্রফিটি অনায়াসে উঠতে পারত আন্দ্রিই লুনিনের হাতেও। ১২০ মিনিট ধরে রিয়ালের দেয়াল হয়ে ছিলেন তিনি পোস্টের নিচে। পরে টাইব্রেকারের রোমাঞ্চেও তিনিই দলের জয়ের ত্রাতা।

ইউক্রেন জাতীয় দলের লুনিন মূলত রিয়ালের রিজার্ভ গোলকিপার। ২০১৮ সালে রিয়ালে আসার পর ধারে বিভিন্ন ক্লাবে খেলানো হয় তাকে তিন মৌসুম। পরে মূল স্কোয়াডে রাখা হলেও বিকল্প গোলকিপার হয়েই ছিলেন। এই মৌসুমের আগেও দলের খুব একটা ভরসা আদায় করে নিতে পারেননি তিনি। গুরুতর চোটে থিবো কোর্তোয়া লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যাওয়ার পর উদ্বিগ্ন রিয়াল তাই ধারে নিয়ে আসে গোলকিপার কেপা আরিসাবালাগাকে। লুনিন তখনও আনচেলত্তির তৃতীয় পছন্দ।

তবে এটিকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন লুনিন। তাকে ও কেপাকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলাচ্ছিলেন আনচেলত্তি। সেই সুযোগটাই দুহাত ভরে গ্রহণ করে এমনভাবে নিজেকে মেলে ধরেন যে, দলের প্রথম পছন্দের গোলকিপার হয়ে ওঠেন। কোর্তোয়ার মতো অসাধারণ একজনের অভাব তিনি বুঝতেই দেননি এই মৌসুমে। ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে বুধবারের ম্যাচে তো এমন পারফরম্যান্স করলেন, যেটি করতে পারলে গর্বিত হতেন স্বয়ং কোর্তোয়াও।

প্রচণ্ড চাপ, প্রতিপক্ষের মাঠ ও দর্শক, দলের রক্ষণাত্মক কৌশল, এত বড় ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথমবার ১২০ মিনিট ধরে খেলা এবং এরপর টাইব্রেকারের পরীক্ষা, সবকিছু মিলিয়ে এমন অভিজ্ঞতা আগে কখনও হয়নি লুনিনের। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ দুর্দান্তভাবে জয় করে লুনিন বার্তাটা দিয়ে রাখলেন, তিনি খুব একটা পিছিয়ে থাকবেন না কোর্তোয়া ফেরার পরও।

‘আমার জন্য এটা ছিল অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। ক্লান্তিতে প্রায় নিঃশেষিত হয়ে গেছি আমি। ক্যারিয়ারের প্রথমবার এরকম ম্যাচ খেললাম… ১২০ মিনিট মাঠে থাকা, এরপর টাইব্রেকার, এত এত চাপ আর এরকম দায়িত্ব… সবকিছু ভালোভাবে করতে পারার অনুভূতি ব্যাখ্যা করার মতো নয়।’

ম্যাচজুড়ে দলকে বারবার রক্ষা করার পর টাইব্রেকারে বার্নার্দো সিলভা ও মাতেও কোভাসিচের শট ঠেকান লুনিন। সিলভার শটটি ছিল বিস্ময়কর। আগের লেগে দুর্দান্ত গোল করা ফুটবলার এবার টাইব্রেকারে অতি দুর্বল এক শট নেন লুনিনের একেবারে সোজাসুজি। জায়গায় দাঁড়িয়েই অনায়াসে বল ঠেকিয়ে দেন রেয়াল গোলকিপার।
লুনিন জানালেন, কোচিং স্টাফের পরামর্শে সিলভার শটের ক্ষেত্রেই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি, ‘কোনো একটি শটের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকিটা আমাকে নিতেই হতো (মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা)। আমরা এটিকেই বেছে নেই (সিলভার শট) এবং স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, এটি আমাদের পক্ষে চলে আসে।’

সিটির বিপক্ষে বুধবার যেরকম রক্ষণাত্মক কৌশল বেছে নিয়েছিল, তাতে লুনিনের এরকম বিরোচিত পারফরম্যান্স জরুরি ছিল দলের জন্য। সিটির আক্রমণের স্রোত সামলে গেছেন তিনি ম্যাচজুড়ে।  লুনিন বলেন, ‘অনেক খেলা আছে, যেগুলোতে লড়াইয়ের পথ বেছে নিতে হয়, অনেক চ্যালেঞ্জ জিততে হয়। সবসময় তো বল পায়ে খেলা যায় না এবং মাঠে সেরা দল হওয়া যায় না। আজকের রাতটি ছিল সেরকমই। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে খেলার চ্যালেঞ্জ এটি… অনেক লড়াই করতে হয়েছে আমাদের এবং আমরা তৈরিই ছিলাম।’

আর দুটি ম্যাচ এভাবে প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামাল দিতে পারলে লুনিন প্রথম বছরেই জিতে যেতে পারেন চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *