মাহিশ থিকসানার বলে এক্সট্রা কাভারে দারুণ শট খেললেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বলের ঠিকানা হলো সীমানা দড়ির ওপার। বাংলাদেশ পেল জয়সূচক রানের দেখা। বছরের প্রথম ওয়ানডে। একটু বিশেষ না হলে কি চলে? অধিনায়ক শান্ত নিলেন সেই দায়িত্ব। সঙ্গে পেলেন মুশফিকুর রহিমকে। দুজনের ধৈর্যশীল জুটিতে একটু একটু করে তৈরি হলো জয়ের পথ। অনবদ্য এক শতক হাঁকালেন শান্ত, দায়িত্ব নিলেন বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাওয়ার। অধিনায়কের ব্যাটের সঙ্গে হেসেছে মুশফিকের উইলোও। শুরুর ধাক্কা সামলে দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৬৫ রানের জুটিতে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়েই দিয়েছে স্বাগতিকরা, তুলে নিয়েছে ছয় উইকেটের দুর্দান্ত জয়।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ বুধবার (১৩ মার্চ) টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। ৪৮.৫ ওভারে ১০ উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। জবাবে ৪৪.৪ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করে ২৫৭ রান।
অধুনা ক্রিকেটের বিচারে ওয়ানডেতে ২৫৬ রানের লক্ষ্য খুব আহামারি নয়। অথচ, এতেই খেই হারাল বাংলাদেশের টপ অর্ডার। স্কোরবোর্ডে ২৩ রান উঠতেই নেই তিন উইকেট। রান তাড়ায় প্রথম বলেই বোল্ড হন লিটন দাস। দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে গোল্ডেন ডাকের লজ্জায় সাজঘরে ফেরেন লিটন। ব্যর্থ হন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। তাকেও ফেরান মাদুশাঙ্কা। সৌম্য তিন রানের বেশি করতে পারেননি। এরপর বিদায় নিয়েছেন তাওহিদ হৃদয়। প্রমোদ মাদুশানের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মাত্র তিন রানে। ২৩ রানে তিন উইকেট হারানোর পর বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
তবে, সেটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি শান্ত। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ম্যাচে ফেরেন তিনি। দুজনের ৬৯ রানের জুটি বাংলাদেশকে সাহায্য করে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দিতে। বলে ৩৭ রান করে মাহমুদউল্লাহ বিদায় নিলেও দলকে টেনে নেন শান্ত। ৫২ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন তিনি। এরপর কুলে দেন শটের দুয়ার। লঙ্কান বোলারদের ওপর ছিড়ি ঘুরিয়ে তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। ১২৯ বলে ১৩ চার ও দুই ছক্কায় অপরাজিত ১২২ রানের ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারসেরাও।
অধিনায়ককে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মুশফিক। অভিজ্ঞতার ঝুলি খুলে অপরাজিত থাকেন ৭৩ রানে। ৮৪ বলে আট চারে সাজানো ইনিংসটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম অর্ধশতক। শান্ত-মুশফিকের ১৬৫ রানের জুটি পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। যাতে পাড়ি দিয়ে বছরের প্রথম ওয়ানডেতে শেষ হাসি হাসল স্বাগতিকরা। সাগরিকার ঝলমলে সন্ধ্যা রাঙাল উৎসবের আবহে। লঙ্কানদের পক্ষে দুই উইকেট নেন মাদুশাঙ্কা। একটি করে উইকেট পান প্রমোদ ও কুমারা।
অন্যদিকে, আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দো ও পাথুম নিশাঙ্কার ব্যাটে শুরুটা ভালোই করে লঙ্কানরা। তাদের ওপেনিং জুটি ভয়ংকর হয়ে উঠছিল। এই জুটি তোলে ৭১ রান। অবশেষে জমে যাওয়া জুটি ভেঙে বাংলাদেশকে স্বস্তি এনে দেন তানজিম হাসান সাকিব। দশম ওভারে ফার্নান্দোকে নিজের শিকার বানান সাকিব। ৩৩ বলে ৩৩ রান করে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন এই লঙ্কান ওপেনার। আভিস্কার পর আরেক ওপেনার নিশাঙ্কাকে বিদায় করেন বাংলাদেশি পেসার। ২৮ বলে ৩৬ রান করে মুশফিকুর রহিমের তালুবন্দি হন নিশাঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার তৃতীয় উইকেটও পান ডানহাতি পেসার সাকিব। এবার তার শিকার সাদিরা সামারাবিক্রমা। উইকেটের পেছনে ডানদিকে ঝাঁপিয়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন মুশফিক। ৮৪ রানে তিন উইকেট হারানো লঙ্কানদের হাল ধরেন অধিনায়ক মেন্ডিস। ৭৫ বলে ৫৯ রানের ইনিংসে দলের ভিত তৈরি করে দেন। তাকে আর আগাতে দেননি তাসকিন আহমেদ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করে মেন্ডিসকে সাজঘরে ফেরান তাসকিন। চারিথ আসালাঙ্কা বোল্ড হন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে।
শ্রীলঙ্কার রানের চাকা শ্লথ করার পেছনে তাসকিনের অবদান আছে। ওয়ানিন্দু হাসারাঙা ও মাহিশ থিকসানাকে পরপর ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের দিকে টেনে নেন তাসকিন। শেষ দিকে লঙ্কানদের হয়ে বুক চিতিয়ে লড়েছেন জানিথ লিয়ানাগে। মিডল অর্ডার এই ব্যাটারের ব্যাট থেকে আসে ৬৯ বলে অপরাজিত ৬৭ রান। তার লড়াইয়েই মূলত ভালো পুঁজি পায় শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন তাসকিন, শরিফুল ইসলাম ও তানজিম সাকিব। এক উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ৪৮.৫ ওভারে ২৫৫/১০ (নিশাঙ্কা ৩৬, ফার্নান্দো ৩৩, মেন্ডিস ৫৯, সাদিরা ৩, আসালাঙ্কা ১৮, লিয়ানাগে ৬৭, হাসারাঙা ১৩, থিকসানা ১, মাদুশান ৮, লাহিরু ৫, দিলশান ০; শরিফুল ৯.৫-১-৫১-৩ , তাসকিন ১০-০-৬০-৩ , সাকিব ৮.৪-০-৪৪-৩, তাইজুল ৮-০-৫৪-০, মিরাজ ১০-১-৩৩-১, সৌম্য ২.২-০-১১-০)।
বাংলাদেশ : ৪৪.৪ ওভারে ২৫৭/৪ (লিটন ০, সৌম্য ৩, হৃদয় ৩, মাহমুদউল্লাহ ৩৭, শান্ত ১২২* মুশফিক ৭৩*; মাদুশাঙ্কা ৮-১-৪৪-২, প্রমোদ ৮-০-৫৩-১, কুমারা ৬-০-৩৫-১, থিকসানা ৯.৪-০-৪৭-০, হাসারাঙা ৮-০-৫৪-০, লিয়ানাগে ৫-০-২২-০)
ফল : বাংলাদেশ ছয় উইকেটে জয়ী।