যোধপুর পার্কের বেলাদুপুর ও জয়া আহসান

বিনোদন

শহর কলকাতা। শীতের দুপুর। কোনোরকম আড়ম্বড় ছাড়া, কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দেখা হলো তার সাথে। তাহার সাথে। যোধপুর পার্ক এলাকার ছোট্ট সুনশান ক্যাফে। নাম মেলবোর্ন ক্যাফে। তারই রাস্তার ওপাশের বাড়িটাতেই থাকেন জয়া আহসান। ক্যাফেতে ঢুকেই বুঝতে পারলাম জয়া আহসান এই শপটিতে নিয়মিতই বসেন। শপের সকলেই বুঝে গেলেন আমরা তার অতিথি।

১০ মিনিটের ভেতরে আসছি, বলে ৮ মিনিটের মাথায় চলে এলেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। কলকাতার বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা, চলচ্চিত্র প্রযোজক সুরঞ্জনা বিড়লা অপেক্ষা করছেন শিল্পীর জন্য। পরনে জিন্স, ওপরে কুর্তা,পায়ে কেডস পরে এক চনমনে কিশোরী যেন এলেন দেখা করতে। বললেন,‘বাড়ি পাল্টানোর ঝক্কি ঝামেলায় আছি। দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর পর নতুন বাসায় উঠতে হচ্ছে।’ জানলাম এই এলাকাতে দীর্ঘদিনের বাস জয়া আহসানের।

২০২৩-এ অর্ধাঙ্গীনি’র ব্লকবাস্টার হিট, এরপর বলিউডে ডেব্যু—বাংলাদেশি একজন শিল্পী হিসেবে গ্লোবাল তারকা এখন তিনিই একমাত্র। যিনি ঠিকঠাক সব গুছিয়ে করে যাচ্ছেন। সুরঞ্জনা বিড়লা বললেন,‘জয়া আমাদের এখানে সত্যিকার অর্থেই এক দেবী। ওকে আজ কাছে পেয়ে মনে হলো, এত বিনয়ী হয় কীভাবে মানুষ? ওর অর্ধাঙ্গীনি ছবিটি আমি ৫ বার দেখেছি। একটাবারও বোর হইনি।’

জয়া কপট লাজুকতা দেখাতে লাগলেন। বললেন, ‘কাজ করেই যেতে যাই। সেই আশীর্বাদটাই করবেন। এখানে একা একটা মেয়ে বাংলাদেশ-ভারত করে যাচ্ছি। আপনাদের ভালোবাসার কল্যাণেই।’ ‘কড়ক সিং’ চলচ্চিত্রে পঙ্কজ ত্রিপাঠি’র সাথে তার স্ক্রিন প্রেজেন্স নিয়েও দারুণ প্রশংসা কুড়াচ্ছেন তিনি। এরই ভেতরে ছবিটি টাইমস অব ইন্ডিয়ার সেরা ১০ মুভির ভেতরে এসেছে। ছবিটি নিয়েও আলোচনা হচ্ছে দারুণ।’

তবে ছবিটিতে জয়ার চরিত্রের ব্যাপ্তি আরো খানিকটা বেশিই চেয়েছিলাম। এমন প্রশ্নে জয়া বললেন, ‘টোটাল গল্পের বডিটা দারুণ লেগেছিল আমার। আর নির্মাতা হিসেবে অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরী তো অসাধারণ। উনি আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। এটাই অনেক মনে করি। কাজটা করতে গিয়েও দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে।’ জানা গেল অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর আগামী একটি ছবিতেও কাজ করছেন জয়া আহসান। সামনে আসছে ভুতপরী। সেই কাজটি সবাই মিলে দেখার অনুরোধ করলেন জয়া। আর এখন যেহেতু হিন্দি ছবি দুই বাংলায় একই সাথে রিলিজ হচ্ছে। তাই সেই ভাবেই বাংলা ভালো মানের ছবি দুই বাংলায় প্রকাশের দাবি জানালেন।

জয়া বললেন, ‘আমার কাছে মনে হয়, বাঙালি দর্শককে সিনেমা হলে আনবার অভ্যেস তৈরি করাটা জরুরি। আর সে কারণে বাংলা ভালো ভালো গল্পের যে ছবিগুলো রিলিজ হচ্ছে। তা একসাথে মুক্তি দেয়ার কাজটি করা যেতে পারে। তবেই বাংলা ছবির একটা সার্বিক দৃশ্য বদলাবে।’ মুগ্ধ চোখেই জয়াকে দেখছিলেন কলকাতার সুরঞ্জনা বিড়লা। জানতে চাইলেন, ‘এখানে এই যে এতদিন বাসা ভাড়া করে থাকার চেয়ে এতদিনে ফ্ল্যাট কেনোনি কেন?’

জয়া বললেন, ‘না, ওসব ঝামেলায় আমি যেতে চাইনি। আমি এখানে নিয়মিত ট্যাক্স দিই, সব কাগজপত্র ঠিকঠাক করেই একজন বাংলাদেশি যেভাবে লিগ্যালভাবে থেকে কাজ করে, সেভাবেই কাজ করছি। এভাবেই থাকতে চাই।’

সম্প্রতি ঢাকার কয়েকটি গণমাধ্যমে জয়াসহ বেশ ক’জন তারকাকে ঘিরে অ্যাপনির্ভর কাজের প্রমোটার হিসেবে খবর প্রকাশ করেছে। ‘এসব মিথ্যে আর ভিত্তিহীন বিষয়ে কোনো কথাই বলতে চাই না। আমি জানিই না বিষয়টি কী। আর সারা বিশ্বে বড় বড় তারকারা বিভিন্ন অ্যাপের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হচ্ছেন। সেখানে এই বিষয়গুলোও গণমাধ্যম বা সবার কাছে স্বচ্ছ হওয়া উচিত। নয়তো বিষয়গুলোকে মনে হচ্ছে আমার না জেনে না বুঝে শিল্পীদের হেয় করা।’- বললেন জয়া।

ইরানি নির্মাতার ‘ফারিশতে’ ছবিটি নিয়েই সম্প্রতি গোয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দারুণ প্রশংসা কুড়ালেন জয়া। সেখানে এই প্রথম বাঙালি কোনো অভিনেত্রীর একা একটি ফেস্টিভ্যালে ৫ টি ছবির প্রদর্শনী হলো। সুরঞ্জনা বিড়লা আর জয়া আহসানের গল্প আলাপ চলল বেশ কিছুক্ষণ। এর  ভেতরে রেস্তরাঁয় কলকাতার কোনো একটি  প্রোডাকশনের কর্তা ব্যক্তি দুজন এলেন জয়ার সাথে খানিক কথা বলতে। সেই কথাটুকু সেরে আবার আড্ডা চলল।

জয়া বললেন, ‘আমার বেশিরভাগ আড্ডা এখানেই হয়। আড্ডা বলতে, কোনো স্ক্রিপ্ট নিয়ে বসা বা কোনো কাজের পরিকল্পনা, সবই চলে এখানে। এই এলাকাটাকে একারণেই ভালো লাগে, কারণ জায়গাটার ভেতরে একটা পুরোনো মফস্বলীর ছোঁয়া রয়েছে। আর আমার ঐ আড়ম্বড়, হৈচৈ ভালো লাগে না।’

সুরঞ্জনা বিড়লা তাদের নিজস্ব প্রযোজনায় সর্বশেষ ‘সুইজারল্যান্ড’ ছবি মুক্তি দিয়েছেন। জয়াকে মাথায় রেখে নতুন একটি মুভি তৈরির প্ল্যান করলেন। অভিনেতা জয়া আহসান প্রসঙ্গে সুরঞ্জনা বিড়লা বললেন, ‘একজন শিল্পী শুধু তো স্ক্রিনে থাকেন না। তাকেও একটি সমাজের ভেতর দিয়ে চলতে হয়। এই অন-অফস্ক্রিন দু’টির সামঞ্জস্য। মার্জিত চলাচল সবাই চলতে পারে না। জয়া পারেন। সেকারণেই তিনি অনন্যা। তার কাজ দেখেছি এতদিন। আজ সামনে থেকে দেখে, আড্ডা দিয়ে খুবই ভালো লেগেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *