দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের দাখিল করা মনোনয়নপত্র তৃতীয় দিনের মতো আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) যাচাই-বাছাই চলছে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম, যা চলবে আগামীকাল সোমবার পর্যন্ত। যাচাই-বাছাইয়ে কোনো প্রার্থীর দেওয়া তথ্যে গরমিল পেলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ৩০ নভেম্বর শেষ হয়েছে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়সীমা। নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক দুই হাজার ৭১২ জন ৩০০ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো মনোনীত প্রার্থী এক হাজার ৯৬৬ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৭৪৭ জন। এ নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো।
গতকাল শনিবার নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব আশোক কুমার দেবনাথ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সব রিটার্নিং কর্মকর্তারা মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। ব্যক্তির দেওয়া তথ্য বিভিন্নভাবে যাচাই করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থান বা সূত্র থেকে ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব তথ্যের সঙ্গে ব্যক্তির দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে বাতিল হতে পারে মনোনয়নপত্র।’
রিটার্নিং কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের নিয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে আগামীকাল সোমবার (৪ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে বৈধ প্রার্থীদের তালিকা জানানো হবে।
যাচাই-বাছাইয়ে নানান বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে—স্বতন্ত্র প্রার্থীদের এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনের তথ্য ঠিক কি না, কিংবা কেউ তথ্য গোপন করেছেন কি না। এ ছাড়া কোনো প্রার্থী ফৌজদারি মামলার আসামি বা ঋণখেলাপি কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের জানান, দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৪৪টি। এর মধ্যে এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে ২৯টি দলের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র ইসিতে জমা দিয়েছেন। এর বাইরে অনিবন্ধিত একটি দলও নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র দিয়েছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ৩০৪ জন করে প্রার্থী ইসিতে দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ৭৪৭ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের ৯১, জাকের পার্টির ২১৮, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১৪২, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ১১৬, তৃণমূল বিএনপির ১৫১, জাতীয় পার্টি-জেপির ২০, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের ছয়, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩৪, গণতন্ত্রী পার্টির ১২, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) ছয়, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির ৩৩, বিকল্পধারার ১৪, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের ৪৭, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১৪, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের দুই, গণফোরামের ৯, গণফ্রন্টের ২৫, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির ১৩, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৮, ইসলামী ঐক্যজোটের ৪৫, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩৭, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএলের পাঁচ, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৭৪, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের ৫৫, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৪৯ ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৮২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
যদিও ইসি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ ২৯৮টি আসনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দিয়েছে। তা ছাড়া ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগ দুজনকে দলীয় মনোনয়নপত্র দিলেও পরবর্তীতে ৩০ নভেম্বর মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের অনুরোধ জানিয়ে রিটার্নিং অফিসারকে চিঠি দিয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, বৈধ প্রার্থীর তালিকা প্রকাশের পর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়সীমা ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন আগামী ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনি প্রচারণা করা যাবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৭ জানুয়ারি।
ইসির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে সারা দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ছয় কোটি সাত লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২ জন।