ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধবিরতি শেষে আবারও সংঘাত শুরু হয়েছে। অধিকৃত উপত্যকা গাজায় বিরাজ করছে ভয় আর ক্রোধ, জাতিসংঘ সেখানকার পরিস্থিতিকে ‘দুঃস্বপ্ন’ হিসেবে অভিহিত করেছে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় হামাস ও ইসরায়েল দুপক্ষই এক অন্যকে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করার পরপরই গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শেষ হয়ে যাওয়ার পর থেকে রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় কাঙ্ক্ষিত ও প্রয়োজনীয় সহায়তা সামগ্রী প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। খবর বিবিসির।
শুক্রবার সকালে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যরা গাজায় প্রবেশ করে আর এতেই হামাসের যোদ্ধাদের সঙ্গে তাদের প্রচণ্ড সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুরো গাজায় শোনা যায় ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ।
তবে যে গতিতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ছে, তাতে সংঘাত বাড়তেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজার আকাশে উড়ছে যুদ্ধবিমান আর শত্রুর অবস্থান শনাক্তে বিশেষ বিমানও ব্যবহার করছে ইসরায়েলি পক্ষ।
ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় গাজা, খান ইউনিস আর গাজার দক্ষিণাঞ্চল যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি উত্তরাঞ্চলের হামলা থেকে নিজেদের বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে। হামলায় ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে বসতবাড়ি, এমনকি নাসের হাসপাতালের পাশে থাকা একটি বাড়িও বাদ যায়নি হামলা থেকে।
এ ছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে ফেলা লিফলেটে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, খান ইউনিসের পূর্বের অংশ ও সালাহ আল-দিন এলাকাকে ‘বিপজ্জনক যুদ্ধাঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সে কারণে সেখানকার লোকজনকে আরও দক্ষিণে মিসরীয় সীমান্তের কাছাকাছি রাফায় সরে যেতে বলা হয়।
ওদিকে, হামাস ইসরায়েলে রকেট হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সেগুলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই আয়রন ডোম আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নামিয়ে আনার দাবি করেছে ইসরায়েল।
নতুন করে শুরু হওয়া এই সংঘাতকে গাজার অধিবাসীদের জন্য একরকম দুর্যোগ নেমে আসার সঙ্গে তুলনা করেছেন জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এলডার। তিনি জানান, এই মুহূর্তে গাজার সবচেয়ে বড় চিকিৎসাকেন্দ্র হিসেবে কাজ করা নাসের হাসপাতালে সাম্প্রতিক হামলায় আহত শিশু ও লোকজনের ভিড় উপচে পড়ছে। অনেক রোগীর পরিবারের সদস্যরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে শুধু চাদর পেতে রাত কাটাচ্ছেন।
এলডার বলেন, এই হাসপাতালে যুদ্ধের শিকার শিশুদের আঘাত ও পোড়া ক্ষতের পাশাপাশি গোলাগুলিতে আহতের সংখ্যা এত বেশি, হাসপাতালটি তাল সামলাতে পারছে না।
এ ছাড়া আল আহলি হাসপাতালের পরিস্থিতিকে ‘ভৌতিক সিনেমা’র সঙ্গে তুলনা করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা রব হোলডেন। তিনি জানান, সপ্তাহের শুরুতে তাদের দল যখন হাসপাতালে যায় তখন সেখানে ভয়াবহ আঘাতে আহত রক্তাক্ত রোগীদের হাসপাতালের মেঝেতে শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পায়। এ ছাড়া বাইরে গাড়ি পার্কিং এলাকায় স্তুপ করে রাখা ছিল মৃতরোগীদের দেহ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানায়, গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে ১৮টি নামমাত্র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, নতুন করে যুদ্ধ শুরুর পর গাজায় অবস্থানরত অধিবাসীদের মানবিক পরিস্থিতি খারাপের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে। খাবার, পানি ও জ্বালানি গ্যাসের চরম সংকট বিরাজ করছে সবখানে। দোকানগুলোতে কোনো পণ্য নেই, আর স্থানান্তরিত লোকজনকে দেওয়ার জন্য সাহায্যপণ্যের সরবরাহও বন্ধ রয়েছে। অনেকেই বাস করছেন অস্থায়ী তাঁবু খাটিয়ে। এর পাশাপাশি যোগ হয়েছে শীতের তীব্রতা। শীত থেকে বাঁচতে গরম কাপড়ের জন্য হাহাকার বাড়ছেই।