মাগুরায় অনিয়ম আর দুর্নীতিতে আকণ্ঠ ডুবে আছে বিদ্যালয়টি

বাংলাদেশ

মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে চলছে তুঘলকি কান্ড। বিদ্যালয়ে পরিক্ষার সময় ছাত্রীদের বসিয়ে রেখে বেমালুম ভুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জেলা শহরে গিয়ে ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

বছরের পর বছর প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হলেও কোন নিয়ম নীতি না মেনেই চলে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি নিয়োগ বাণিজ্য। এরফলে এলাকাবাসি ক্ষেপে গিয়ে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে । ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির যৌথ রাজত্ব থেকে বিদ্যালয়টিকে রক্ষা করতে একাধিকবার স্থানীয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দারস্থ হয়েছে তারা। এলাকার বিদ্যোৎসহি ও কমিটির সদস্যদের এমনকি অধিকাংশ দরখাস্তকারীদের না জানিয়েই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সভাপতির নিজের ছেলেসহ ২জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে কুচিয়ামোড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় সকাল ১০টায় ইংরেজি পরিক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ১টা পর্যন্ত ছাত্রীদের পরিক্ষা নেয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক কাউকে কোন দায়িত্ব না দিয়েই শহরে চলে গেছেন। ইতিমধ্যে অতিরিক্ত টেনশনের কারণে এক ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে গেলে স্থানীয় অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। দুপুর পর্যন্ত ছাত্রীরা কাসে বসে থাকলেও প্রধান শিক্ষক ইংরেজি পরিক্ষা নিতে আসেন নি।

এক অভিযোগে নিরাপত্তা কর্মী পদের জন্য দরখাস্ত করা ইমরান হোসেন নামে এক প্রার্থী জানান, গত ২২/১১/২২ তারিখে দুটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে নৈশ প্রহরী ও নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ৬ মাসের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করার বাধ্য বধবতা থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রায় ১ বছর পর্যন্ত নিয়োগ আটকে রাখে। পরে হঠাৎ করে গত ২১ নভেম্বর ২৩ তারিখে নিজেদের পছন্দের কয়েকজন প্রার্থীকে ডেকে নিয়ে মাগুরায় গিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। অন্যদিকে ইন্টারভিউ কার্ড না পেয়ে তার মত আরও অনেকেই নিয়োগ পরিক্ষায় অংশ নিতে না পেরে আর্থিক ও মানষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। একই অবস্থায় পড়েছেন প্রার্থী নিরব রায়, বিজয় বিশ্বাস , প্রসেনজিৎ বিশ্বাস , সরন বিশ্বাস সহ অনেকেই।

কুচিয়ামোড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য সুরঞ্জন বিশ্বাস জানান, এলাকার মেয়েদের লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে এ স্কুলটি গ্রামের সকলের সহযোগিতায় স্থাপন করা হয়। কিন্তু বিদ্যালয়ের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানটিকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির মত ব্যবহার করেন। তারা কোন নিয়ম নীতি অথবা আইন কানুন মানতে চান না। শিক্ষক ও কমিটির একাংশের স্বেচ্ছাচারিতায় তারা এখন আর বিদ্যালয়ের কোন ভালমন্দে আসতে চান না।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য নিতে গেলে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি কিশোর বিশ্বাস এর সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা না করে বাড়ি থেকে দুরে মাঠের মধ্যে চলে যান। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুশান্ত কুমার মন্ডল এর সরল স্বীকারোক্তি, তিনি পরিপূর্ণ প্রধান শিক্ষক না হওয়ায় নিয়োগের নিয়ম কানুন সম্পর্কে তিনি তেমন অবগত নন। অন্যদিকে স্কুলে ছাত্রীদের পরিক্ষার সঠিক সময়ে পরিক্ষা না হওয়ার বিষয়টি নজরে আনলে তিনি তার ভুল স্বীকার করেন।

এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম দাবী করেন, তার জানামতে যথাযথা নিয়ম কানুন মেনেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। এ ব্যাপারে কারও কোন অভিযোগ থাকলে লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *