একজন আল আমিন, আর এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত

বাংলাদেশ

 

তপ্ত রোদ। মতিঝিলে গেলাম নিউজ কাভার করতে। পিপাসায় কাতর হয়ে কোন দোকানপাট খুজছিলাম। কাছেই পেলাম লেবুর শরবতের ভ্যান। দেখলাম ১০ কি ১১ বছরের এক ছেলের হাকডাক। গরমে সস্তি দিতে সবাইকে এক গ্লাস শরবত খেতে বলছে। আর ভ্যানের এক কোণায় ঘুমিয়ে আছে তার আদরের ছোট বোন।

শরবত খেতে খেতে কথা হয় ওর সাথে। নাম আল আমিন। বছর দেড়েক আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মেরুদণ্ডে মারাত্মক আঘাত পায় ওর বাবা। পঙ্গুত্ব বরণ করে নেয়। এরপর থেকেই বাবার ব্যবসার ভার ওর ওপর। মা কাজ করেন বাসা বাড়িতে। আর তাই ছোট বোনকেও সামলাতে হয় ওর। যে গরমে আমাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে, ক্লান্ত হয়ে সেই গরমেই ভ্যানের কোণে আদরের বোনকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে আল আমিন।

জীবন কি এখনো ঠিকভাবে বুঝে উঠতে হয়তো পারেনি, তবে জীবন তাকে প্রতিটি মুহুর্তে শেখাচ্ছে কিভাবে টিকে থাকতে হবে। ক্ষুধার জ্বালা নিভাতে থেমে থাকে নি। দেশের ব্যস্ততম এই এলাকায় খুঁজে ফেরে দুটি টাকা।

কিন্তু ভালো লাগলো কি জানেন? ছেলেটা এত চাপেও ভেঙ্গে পড়েনি। ছোট্ট হাতে সামলাচ্ছে সংসার। ভাই হিসেবেতো একশোতে একশো। আর পরিবারের ভবিষ্যৎ হিসেবে চালিয়ে যাচ্ছে পড়াশোনা । বিকেলে মা যখন বাড়ি ফেরে তখন ওই দিনের মতো শেষ হয় তার সংগ্রাম। জীবনের কোন এক সময় যেন এক চিলতে আলোর খুঁজে পায় তার খোঁজে যায় স্কুলে। পড়াশোনা কতটুকু হয় জানিনা। তবে স্যালুট জানাতে ইচ্ছে হয় ওর চেষ্টাকে। এক গ্লাস শরবতের পেছনে যে কতো বড় একটা সংগ্রামের গল্প লুকিয়ে আছে ভেবে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম।

দিন আসে দিন যায়, বদলায় না এমন লাখো আল আমিনের কোন কিছুই। শহরজুড়ে এত এত ধর্ণাঢ্য মানুষ, এত প্রাচুর্য। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় এমন শিশুদের জন্য খুব বেশি কিছু করার সামর্থ্য না থাকায়। বিত্তশালী এই সমাজকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হয়, লাখ টাকার একটা শখ ভুলে গিয়ে পাশে দাঁড়ান না এমন সব শিশুদের শিক্ষিত করতে। বাজি ধরে বলতে পারি, কখনোই ঠকবেন না আপনারা।

 

রিপোর্ট : জামিল হাসান শান্ত
মোবাইল ফোনে ছবি তোলা ২৩ মে ২০২৩

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *