শ্রম আইন লঙ্ঘন হলে ব্যবস্থা, হুঁশিয়ারি বাইডেনের

আন্তর্জাতিক

বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের সঙ্গে পদ্ধতিগতভাবে যুক্ত হওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও অন্য কূটনীতিকদের ‘সরাসরি শ্রম কূটনীতিতে যুক্ত হতে এবং শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় কর্মসূচি বাড়াতে’ নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিতের লক্ষ্যে একটি স্মারকের (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) মাধ্যমে তিনি এই নির্দেশনা দেন। ওই স্মারকে প্রেসিডেন্ট বাইডেন শ্রম আইন লঙ্ঘন হলে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা, ভিসা বিধিনিষেধ ও অন্যান্য কর্মযজ্ঞ চালাবেন বলে হুঁশিয়ারি দেন।

স্মারকে জো বাইডেন বলেন, ‘বিদেশে নিযুক্ত এজেন্সিগুলো সরকারি, বেসরকারি ও বহিরাগত নেতাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক শ্রমিকবিরোধী ও ইউনিয়নবিরোধী হয়রানির উপযুক্ত প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করবে।’ এক্ষেত্রে মিথ্যা মামলাসহ সহিংসতা, কূটনৈতিক নানা বিষয় পর্যালোচনায় রেখে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য জরিমানা, ভিসা বিধিনিষেধ ও অন্যান্য কর্মযজ্ঞ চালাবে।

জো বাইডেন আরও বলেন, ‘বিদেশে নিযুক্ত এজেন্সিগুলো যথাযথভাবে প্রস্তাব বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, মানবাধিকার, নিরাপত্তা ও সংশ্লিষ্ট ফোরামের আলোচনায় তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। সেখানে তারা শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও সহিংসতার হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন, কালো তালিকাভুক্তির হুমকি, লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ও সদস্যদের বিরুদ্ধে বৈষম্য মোকাবিলার প্রস্তাব নিয়ে কাজ করবে।’

স্মরকলিপিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘স্টেট সেক্রেটারি সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে পরামর্শ করে শ্রম অধিকার রক্ষাকারী এবং ঝুঁকিতে থাকা প্রথম সারির সংস্থাগুলোর জন্য সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

আরও বলা হয়েছে, এই স্মারকলিপির ধারা-১-এ উল্লিখিত নীতিগুলো নিশ্চিত হলে বিদেশে নিযুক্ত সংস্থাগুলো শ্রম-সম্পর্কিত উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার ওপর আন্তদূতাবাসীয় সমন্বয়কে উন্নত করবে।

ধারা-১-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, ‘টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, মানবাধিকার, গণতান্ত্রিক স্থিতিস্থাপকতা, ন্যায্য প্রতিযোগিতা, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিদেশে একটি শক্তিশালী মধ্যবিত্ত শ্রেণি গড়তে শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন অপরিহার্য। শ্রম অধিকার আমাদের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং কার্যকর বৈদেশিক নীতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য আমার প্রশাসন শ্রমের মান উন্নয়ন নিশ্চিতসহ শ্রমিকদের দাবিকে সিদ্ধান্তে পরিণত করতে এবং জোরপূর্বক ও অন্যায্য শ্রমের বিরুদ্ধে নিয়ম প্রয়োগে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রচেষ্টা ন্যায্য ও উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে অবদান রাখবে।’

স্মারকলিপিতে বাইডেন আরও বলেন, ‘২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল নির্বাহী আদেশ ১৪০২৫-এ গঠিত শ্রমিক সংগঠন এবং ক্ষমতায়নের টাস্ক ফোর্সের মাধ্যমে আমার প্রশাসন কর্মক্ষেত্রে মার্কিন শ্রমিকদের দাবি ও ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে কার্যনির্বাহী বিভাগ এবং সংস্থাও অন্তর্ভুক্ত।’

‘বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, অধিকার ও শ্রমমান উন্নয়নের উদ্দেশগুলো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে’ বলে মনে করেন জো বাইডেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রশাসনের নীতি হলো—বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন ও সংগঠিতকরণ, শ্রমিকদের অধিকার এবং শ্রমের মান উন্নয়নে সম্পূর্ণ-সরকারি পদ্ধতি অনুসরণ করা। আমার প্রশাসন বিশ্বব্যাপী শ্রম অধিকার এবং মান নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের পরিকল্পনা ও ফেডারেল সরকারের নীতি গ্রহণ করবে, যা শ্রম অধিকার এবং মানগুলোর ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব নেতৃত্বকে উন্নীত করবে।’

জো বাইডেনের স্মারকলিপি প্রকাশের পর তা নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। সেখানে তিনি জানিয়েছেন, এর মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার বিষয়টিকে নিজেদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশি এক শ্রমিক ও অ্যাক্টিভিস্ট কল্পনা আক্তারের নাম উল্লেখ করে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার স্মরকলিপিতে বিশ্বজুড়ে শক্তিশালী শ্রম অধিকার জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং কার্যকরের কথা তুলে ধরেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘শক্তিশালী শ্রম অধিকার জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এবং কার্যকর বৈদেশিক নীতির চাবিকাঠি। এটি শুধু তাদের নিজেদের ইস্যু নয়, এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতিবিষয়ক। এটি খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।’

পরে ব্লিঙ্কেন বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় তাদের উদ্যোগের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিবকার প্রতিষ্ঠায় সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সাধারণ জনগণ, বেসকারি সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত। সারা বিশ্বে আমাদের দূত ও দূতাবাসে কর্মরতরা শ্রমিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যেন তাদের দাবি প্রতিফলিত হয়।’

ব্লিঙ্কেন আরও বলেন, ‘যারা ট্রেড ইউনিয়নের নেতা, শ্রম অধিকারকর্মী, শ্রম সংগঠনকে হুমকি দেয় তাদের জবাবদিহিতা ও শাস্তির আওতায় আনব। এরজন্য আমাদের কাছে যা আছে, যেমন—নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্য পেনাল্টি, ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করব। আমরা বাংলাদেশি গার্মেন্টসকর্মী কল্পনা আক্তারের মতো মানুষদের কাছে যাব। কল্পনা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস তার পক্ষে থাকায় তিনি বেঁচে আছেন। যখন আমরা আমাদের ভাষাকে ব্যবহার করি, যখন বিশ্বব্যাপী আমরা কাজ করি, তখন আমরা শ্রম অধিকার নিশ্চিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারব।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বক্তব্যের শেষে জানিয়েছেন, যেসব জায়গায় সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয় সেখান শ্রমিকদের রক্ষায় আমরা কোনো পণ্য আমদানি করব না। এটা আমাদের দেশের বৈদেশিক নীতিবিষয়ক পদক্ষেপ।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *