দেশব্যাপী বিএনপির ডাকা তৃতীয় দফার ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, নৌ ও রেলপথে সর্বাত্মক অবরোধ শুরু হচ্ছে আজ। আজ বুধবার (৮ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে অবরোধ শুরু হয়ে শুক্রবার ভোর ৬টায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শেষ হবে। দ্বিতীয় দফার ৪৮ঘণ্টার অবরোধ শেষে গত সোমবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ দেশব্যাপী নতুন করে দুই দিনের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে তিনি দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে দলের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা ও পণ্ড করা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে এই অবরোধের কর্মসূচি পালিত হবে। বিএনপির পাশপাশি জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, এলডিপিসহ অন্যান্য দল ও জোটও দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে।
দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি সফলে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। এর আগে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে সহিংসতা ও হামলার ঘটনায় পরদিন সারা দেশে হরতাল পালন করে বিএনপিসহ এসব দল। এরপর ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর এবং ৫ ও ৬ নভেম্বর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো।
দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশবাসীকে সর্বাত্মক হরতাল সফলের জন্য আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন চলবে। এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। শত প্রতিকূলতার মাঝেও আশা করি জনগণ ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি সফল করবে।’
১০ দিন ধরে তালা ঝুলছে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে: বিএনপির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকে গত ১০ দিন ধরে তালা ঝুলছে। পুলিশের সদস্যরা এখনো কার্যালয়ের সামনেই অবস্থান নিয়ে আছেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে এমন চিত্র দেখা গেল। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পরদিন থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। কার্যালয়ের মূল ফটকে তালাও ঝুলছে ওই দিন থেকে। এ হিসাবে ১০ দিন ধরে বিএনপির কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অবস্থানের পাশাপাশি গত শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে লোহার তৈরি ১০টি ব্যারিকেড (রোড ব্লক) আনা হয়। সেগুলো এখনো কার্যালয়ের সমানে রয়েছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আরামবাগে আওয়ামী লীগের সমাবেশের কারণে ব্যারিকেডগুলো আনা হয়েছে। এগুলো সরিয়ে নেয়া হবে। সরেজমিনে দেখা যায়, কার্যালয়ের সামনে অবস্থানরত পুলিশ সদস্যদের কেউ দাঁড়িয়ে আছেন, আবার কেউ বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। উত্সুক লোকজন কার্যালয়ের আশপাশে কিছু সময় দাঁড়িয়ে থাকার পর চলে যাচ্ছেন। কার্যালয়ের আশপাশে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায়নি। তবে পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন এলাকা এড়িয়ে চলছেন বলে জানা যায়।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জুলাই থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সরকার পতনের দাবিতে একদফা আন্দোলন শুরু করে। একদফা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় গণমিছিল, পদযাত্রা, অবস্থান, সমাবেশের মতো কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডেকেছিল বিএনপি। ওই সমাবেশকে সামনে রেখে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ফলে মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। মহাসমাবেশে হামলাসহ সরকার পতনের একদফা দাবিতে এরপর থেকে বিএনপি হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
