সাকিবের একার দোষ দিয়ে লাভ নেই: সুজন

খেলাধুলা

ভারতে বিশ্বকাপে নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে বাংলাদেশ। এবারের আসরটিতে বড় আশা জাগিয়ে গেলেও ব্যর্থতার চরম দায় নিয়ে ফিরতে হবে তাদের। টুর্নামেন্টটিতে এখন পর্যন্ত নিজেদের সাত ম্যাচের মধ্যে কেবল জিতেছে একটি ম্যাচে। সব শেষ পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর বাদ পড়েছে রাউন্ড রবিনের দৌড় থেকে।

তবে এখন লক্ষ্য আসরের সেরা আট দলের তালিকায় নিজেদের রাখার। কারণ তা না হলে আর ২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে পারবেন না টাইগাররা। বাকি আছে আর দুই ম্যাচ। তার মধ্যে ৬ নভেম্বর দিল্লিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে মাঠে নামবে সাকিবরা। বর্তমানে শহরটিতেই অবস্থান করছে তারা। গতকাল দিল্লিতে প্রথম দিনের অনুশীলনে নামার কথা থাকলেও দিল্লির ভয়াবহ বায়ুদূষণের কারণে খেলোয়াড়দের অনুশীলন পণ্ড হয়ে যায়।

এদিকে বিশ্বকাপে গোটা দল অফ ফর্মে। টাইগাররা ব্যাট-বল কিংবা ফিল্ডিং তিন ডিপার্টমেন্টেই ব্যর্থ ভারতে। শুধু তাই নয়, সব শেষ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বটেই বিশ্বের অন্যতম সেরা পারফরমার ছিলেন সাকিব। ব্যাটিংয়ে ৬০৬ রান করা সাকিব বোলিংয়ে নিয়েছিলেন ১১ উইকেট। তাই এবার তার দিকেও অন্যরকম নজর ছিল ভক্তদের।

কারণ ২০১১ সালের পর এবার আবার তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছে। তবে এবার আর তেমনটি দেখা যাচ্ছে না। মাঠে সাকিবকে চেনাই যাচ্ছে না। সব কিছু মিলিয়ে দলের ব্যর্থতা এবং নিজের ব্যর্থতা সব কিছুর দায় এখন সাকিবের ওপরই চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপে দলের এমন পারফরম্যান্সে আঙুল উঠছে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ওপর। বিভিন্ন গণমাধ্যম কিংবা সমর্থক কেউই ছেড়ে কথা বলছেন না। সব খানেই দোষ খুঁজে পাচ্ছে অধিনায়কের। তবে বাংলাদেশ টিম ডিরেক্টরের মতে, দোষ একা অধিনায়কের নয়, দোষ সবার।

গতকাল দিল্লিতে টিম হোটেলের বাইরে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয় টাইগার টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। শুরুতেই তিনি জানান বাংলাদেশ দলের অবস্থা। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই একটু স্তব্ধ, বাংলাদেশের এমন পারফরম্যান্স কবে আমি শেষ দেখেছি আমার ঠিক মনে নেই।’

এরপর দলের ব্যর্থতায় সাকিবের ওপর আঙুল তোলার প্রসঙ্গে সুজন বলেন, ‘সাকিব তো তার ১০০ ভাগের ১০ ভাগও না (খেলতে পারেনি), এটা সাকিবও বুঝে ভালো। এজন্যই তো ও ঢাকায় গিয়েছিল ট্রেনিং করতে হয়তো-বা। ও জানে যে, ও কতটা উদগ্রীব পারফর্ম করার জন্য। খালি ওর পারফরম্যান্স না, ও চায় দল জিতুক। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে দল পারফর্ম করতে পারছে না, দল জিততে পারছে না। ২০১৯ বিশ্বকাপে যেভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে, অধিনায়ক হিসেবে সেভাবে করতে না পারাও একটা কারণ হতে পারে।’

এসময় তিনি আরো বলেন, ‘এটা শুধু সাকিবের একার দোষ দিয়ে লাভ নেই। দলে তো সাকিব একা খেলেন না, আরো ১০ জন খেলোয়াড় খেলে। অধিনায়কের দায়িত্বটা একটু ভিন্ন, কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে তো সবার দায়িত্ব এক। সাকিব যখন ব্যাটিং করে সাকিব তো তখন অধিনায়ক না, তখন সে একজন ব্যাটার। যখন বোলিং করে তখন সে একজন বোলার। দিনশেষে সব ব্যাটার-বোলারকে একই দায়িত্ব নিতে হবে। অধিনায়ক হিসেবে আপনাকে সেই সমালোচনা নিতেই হবে, এটা খুব স্বাভাবিক। আমার মনে হয়, সব সমালোচনা সাকিবের না, আমাদের সবার সমালোচনা (হওয়া উচিত)। বাংলাদেশ যখন আসে তখন আমরা সবাই একটা দল। আমিও যেমন একটা অংশ। সেটা আমারও ব্যর্থতা। আমি মনে করি, ব্যর্থতাটা আমাদের সবার, আমরা ভালো করতে পারিনি। তবে খেলোয়াড়রা যেহেতু মাঠে খেলে তাদের ব্যর্থতা সবার আগে।’

গেল কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ বড় কোনো টুর্নামেন্টে যাওয়ার আগেই দলের টিম ডিরেক্টর ভূমিকায় দেখা যায় টাইগার সাবেক পেসার খালেদ মাহমুদকে। সে সময় তাকে দলের ওপর বেশ কর্তৃত্ব খাটাতেই দেখা যায়। খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণও করতেন তিনি। তবে এবার আর তার এমন ক্ষমতা নেই, এবার রয়েছে তার সীমাবদ্ধতা। এ বিষয়ে বলেন, ‘বিসিবি থেকে আমাকে যে ভূমিকা দেওয়া হয়েছে সেটাই করার চেষ্টা করছি। প্রতিটা ট্যুরেই একটা বাড়তি থাকত যে, আমি দল নির্বাচনের অংশ থাকতাম, যেটা এবার নেই। আমার তো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। আমাকে বলে দেওয়া হয়েছে, আমি কতটুকু পারব, কতটুকু পারব না। এখন ক্রিকেটিং রুল আমার না।’

তবে নিজের এমন ভূমিকা তিনি উপভোগ করছেন না সুজন। তিনি এভাবে দলের সঙ্গে থাকতেও চাননি জানিয়ে বলেন, ‘খুশি তো (না) আমি তো এভাবে থাকতেই চাই না। যেহেতু আমার রক্তেই ক্রিকেট। কোচিং করি—এটা আমার পেশা। টেকনিক্যাল মানুষ হিসেবে গত ট্যুরগুলাতে যে ভূমিকা ছিল—এসব থেকে আমি দূরেই আছি।  আমি উপভোগ করছি কি না—না, অবশ্যই না। একটা ট্যুরে আমি অভিভাবক হিসেবে থাকব, নিয়মশৃঙ্খলা বা অন্য বিষয় দেখব। সেটা তো আমার কাজ না। সেটাও আমি দেখতাম, তবে আমি ক্রিকেট দেখতাম। এভাবে থাকতে চাইনি। যেটা হয়েছে গেছে, চিন্তা করে লাভ নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *