রেকর্ড বৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বন্যা দেখা দিয়েছে। দেশটির স্থানীয় সময় শুক্রবার (২৯ সেপ্টেম্বর) টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে শহরটির বিরাট অংশ। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে জনবহুল শহরটির রাস্তা, স্কুল, সাবওয়ে ও অনেক ভবনের বেজমেন্ট পানিতে তলিয়ে গেছে। খবর সিএনএনের।
মার্কিন গণমাধ্যমটি জানায়, শুক্রবার সকালের দিকে টানা বৃষ্টিতে খুব দ্রুত পানি বেড়ে যায়। বেজমেন্টে থাকা অনেক গাড়ি পানিতে তলিয়ে যায়। শহরের সবচেয়ে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায়। এলাকাটিতে ২০৩ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা ১৯৪৮ সালের পর সর্বোচ্চ। ব্রুকলিনে শুক্রবার সকালের তিন ঘণ্টায় এক মাসের সমান বৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে ছিল ঝোড়ো হাওয়া।
এমন বৃষ্টিপাতের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকেই দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, উষ্ণ বায়ুমণ্ডল একটি বিশাল স্পঞ্জের মতো কাজ করে এবং বেশি মাত্রায় জলীয় বাষ্প শোষণ করতে পারে, যা পরে ছিটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। আর এতেই অতিবৃষ্টির সঙ্গে মুহূর্তেই বন্যা দেখা দেয়।
শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্কের প্রধান জলবায়ু কর্মকর্তা রোহিত আগরওয়ালা বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে আমরা জানি, এই পরিবর্তিত আবহাওয়ার ধরনটি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল। দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা হলো আমাদের জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। অবকাঠামোগুলো দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না।’
শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ নিউইয়র্কজুড়ে ৭৬ দশমিক ২ থেকে ১৫২ দশমিক ৪ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে বৃষ্টি কমে আসে এবং একপর্যায়ে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যার জেরে শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছে নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোচুল। স্থানীয় একটি সম্প্রচারমাধ্যমে সেওয়া সাক্ষাৎকারে গভর্নর বাসিন্দাদের প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি ভ্রমণে না যাওয়ার জন্যও বলেন তিনি।
ক্যাথি হোচুল বলেন, ‘এখনকার আবহাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং। এটি জীবনের জন্য হুমকির ঘটনা। আমি সব নিউইয়র্কবাসীকে সতর্কতা মেনে চলার জন্য বলছি।’ নিউইয়র্কের পর নিউজার্সি প্রদেশেও জরুরি অবস্থা জারি করেন গভর্নর পিল মারফি।
নিউইয়র্কের ফায়ার ডিপার্টমেন্টের তথ্যমতে, প্লাবিত শহরের ছয়টি বেসমেন্টে দমকলকর্মীরা উদ্ধার কাজ করেছেন। শহরটির স্কুল চ্যান্সেলর ডেভিড ব্যাঙ্কস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘শহরের থাকা এক হাজার ৪০০ স্কুলের মধ্যে দেড়শটিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এসব স্কুল শুক্রবারও খোলা ছিল।’
বেশ কয়েকটি রেললাইন ও সাবওয়েতে বন্যার পানি পাওয়া গেছে। এতে করে পরিবহণ পরিষেবায় ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটে। ব্রুকলিনের ১০টি রেললাইন ও উত্তরের তিনটি মেট্রোলাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আগামী সাত দিনে আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।